চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কি কারণে এতো অভিমান!

ঢাকার ফরেন অফিস যখন বললো, নভেরার সঙ্গে দেখা করতে চান প্রধানমন্ত্রী, অ্যাপয়ন্টেমেন্টটা কনফার্ম করে যেনো দ্রুত জানানো হয়, তখনো তেমন একটা গা করেনি ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেখা করতে চান- শুনেইতো নভেরা নামের মহিলাটি দৌড়ে ছুটে আসবেন’- অনেকটা এমন ভাব দূতাবাস কর্মকর্তাদের।

সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে ঢাকা থেকে যখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর কনফার্মেশন চাওয়া হলো- তখন ছুটোছুটি শুরু হলো। আর ঠিক তখনি তারা টের পেলেন- নভেরাকে তারা যেমনটি ভেবেছিলেন, তিনি আসলে ঠিক তেমনটি না। অনেক চেষ্টা করেও দূতাবাস কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নভেরাকে সাক্ষাতে রাজি করাতে পারলেন না।

এদিকে ঢাকা থেকে উপর্যুপরি চাপ, যে ভাবেই হোক নভেরার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট যেনো ঠিক থাকে। মহাবিপদে পড়লেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা শ্মরণাপন্ন হলের আনা ইসলামের।

সুদুর প্যারিসেও নভেরা নির্জন জীবন যাপন করেন। তাঁর সেই নির্জন জীবনে আনা ইসলামের যেনো অন্যরকম প্রবেশাধিকার। রুটিন করে সপ্তাহের একটা দিন নভেরার সাথে কাটান। কতো কি যে গল্প হয় তাদের। শুধু একটাই শর্ত- আনা এসব নিয়ে লিখতে পারবেন না। খ্যাতিমান শিল্পী শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী আনা নিজেও অত্যন্ত ভালো লেখেন। নভেরার সেই শর্ত মেনে নিয়েই সখ্য অব্যাহত রাখেন নভেরার সঙ্গে।

এবার প্রস্তাবটা তুলেন আনা । কিন্তু নভেরা- সরকার, প্রধানমন্ত্রী এসবের সাথে জড়াতে চান না কিছুতেই।
: ‘আপনি কি জানেন- আপনার সঙ্গে কে দেখা করতে চান?- প্রশ্ন করেন আনা।
: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী!- নভেরা জবাব দেন।
: না। আপনার সাথে দেখা করতে চান- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে।
: বঙ্গবন্ধুর মেয়ে! – এবার রাজি হয়ে যান নভেরা।

শিল্পী শাহাবুদ্দিন আর আনার সাথেই এসেছিলেন নভেরা। হোটেলে নভেরাকে কতোক্ষণ যে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। নভেরার সামনে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন- তিনি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী।

নভেরাকে জড়িয়ে ধরে শেখ হাসিনা বললেন, বলুন, একবার অন্তত বাংলাদেশে যাবেন আপনি। আমার মেহমান হয়ে আপনার নিজের দেশটাকে দেখতে যাবেন। বলুন যাবেন আপনি।
শেখ হাসিনার কণ্ঠে কি কাতরতা!

না। নভেরা বাংলাদেশে আর যাননি। শেখ হাসিনার অতিথিও তিনি হননি। কিন্তু শেখ হাসিনা তাঁকে সম্মান জানিয়েছিলেন। দেশের এই কৃতি সন্তানটিকে একবারই বাংলাদেশ সম্মান জানিয়েছিলো- শেখ হাসিনা করেছিলেন সেটি।

সেই নভেরা এখন সব জল্পনা কল্পনার উর্ধ্বে। আমরা কেউ আর তাঁকে বলতে পারবো না- নভেরা দেশে আসুন। শেখ হাসিনাও আর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারবেন না- প্লিজ, একটা বারের জন্য আপনার নিজের দেশটা দেখতে আসুন।

এইসব হয়তো আর হবে না। কিন্তু নভেরাকে, নভেরার অভিমানগুলো কি আমরা কোনোদিনই জানতে পারবো না? জানি, নভেরা তার জীবনের গল্পগুলোর কতোকিছুই না উজাড় করে বলেছেন আনা ইসলামকে। নভেরার জীবদ্দশায় আনাও যক্ষের ধনের মতো সেগুলো আগলে রেখেছেন।
আনা কি এখনো তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায়ই অনড় থাকবেন?