বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারতের কাশ্মীরের অবস্থা এবং আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাচেলেট।
সোমবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪২তম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
মিশেল ব্যাচেলেট বলেন: বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর নানা পদক্ষেপের কারণে কাশ্মীরে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।
এ সময় কাশ্মীরের জনগণের মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন: ভারত সরকার কাশ্মীরে চলমান শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, ইন্টারনেট যোগাযোগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে আটক করেছে।
কাশ্মীরের জনগণের মানবাধিকারের সুরক্ষায় এবং সম্মান নিশ্চিত করতে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ব্যাচেলেট।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আমি ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাবো যেন কাশ্মীরের অচলাবস্থা ও কারফিউ তুলে দিয়ে সেখানকার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হয়। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নির্ধারণী যেকোনো ধরণের প্রক্রিয়ায় জনগণের পরামর্শ ও অংশগ্রহণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
গত আগস্টের শুরুর দিকে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। এরপর থেকে সেখানে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
অন্যদিকে গত ৩১ আগস্ট আসামের এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) তালিকা প্রকাশ করার পর যে ১৯ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে তাদের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান।
এনআরসির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, ‘এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদেরকে আপিলে করার সুযোগ, নির্বাসন না করা এবং বাদ পড়ারা যাতে রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে সে বিষয়ে আমি ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর এসব প্রশ্ন ঘুরলেও আসাম সরকার গত বছর খসড়া তালিকার পর একটা বিবৃতি দিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলেও এনআরসি ভুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের আসাম সরকার সকল ধরনের আইনি সহায়তা দিয়ে সাহায্য করবে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য আগেই বলেছে, যাদের নাম আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় স্থান পায়নি সে সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য আইনি বিকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি বলে গণ্য করা হবে না।
এমন প্রেক্ষাপটে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা আপিলের জন্য ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় পাবেন। আপিল আবেদনের শুনানির জন্য রাজ্যে কমপক্ষে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এরই মধ্যে অবশ্য ১০০ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মধ্যে গঠন করা হবে।
এসব ট্রাইব্যুনালে হেরে গেলে যে কেউ উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন। সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে বন্দীশিবিরে নেওয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আসাম সরকার।