চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কাশ্মীরে ১৪৪ ধারায় অবরুদ্ধ ঈদ

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল আযহার দিনও চলছে ১৪৪ ধারা। স্থানীয় জনগণকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। পথে পথে টহল দিচ্ছে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারির গাড়ি।

সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় শ্রীনগরের বেশিরভাগ মসজিদেই ঈদের নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরে স্থানীয় ছোট ছোট মসজিদে ঈদের নামাজ পড়া হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে সেসব ঈদের জামাতের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে জানিয়েছে, ঈদের বিশেষ নামাজের পর কোথাও কোথাও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে বলে খবর রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে। তাই একদিকে মানুষকে ঈদের নামাজ পড়তে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, অন্যদিকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের সামনে।

আর এ কারণেই কারফিউ তুলে নেয়ার একদিন না পেরোতেই আবারও ১৪৪ ধারা জারি করা হয় জম্মু কাশ্মীরের বেশিরভাগ এলাকায়। ঈদ উল আযহা উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে হয়েছে পুরো কাশ্মীর উপত্যকাকে।

এ সময় এবং এনডিটিভি জানিয়েছে, বড় মসজিদগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বহু মানুষের জমায়েত করতে দিচ্ছে না প্রশাসন। স্থানীয় মসজিদেই সবাইকে ঈদের নামাজ পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যে কোনো বড় জমায়েত হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।কাশ্মীরে ঈদ-১৪৪ ধারা

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ফলে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনসহ বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা তুলে নেয়ার ঘোষণার পর থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান ১৪৪ ধারার কারফিউ শনিবার তুলে নেয়া হয়েছিল, যেন জনগণ ঈদ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও কাজকর্ম করতে পারে।

এ উপলক্ষে কারফিউ তুলে নেয়ার পর শনিবারই শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকার কিছু কিছু করে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। ঈদের টুকিটাকি কেনাকাটা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পথে বেরিয়ে আসে সাধারণ মানুষ। রোববার সকাল থেকে মোটামুটি সব দোকান খুলতেই ভিড় জমে যায় ক্রেতাদের।

টাকা তুলতে কয়েকটি এটিএম’ই ভরসা, কেননা একে তো টানা সপ্তাহখানেক ধরে চলা অস্থিরতা ও কারফিউয়ের কারণে প্রায় সবারই হাত খালি; অন্যদিকে অধিকাংশ এটিএমও একই কারণে ফাঁকা। ফলে যে কয়েকটি এটিএম বুথে টাকা আছে সেগুলোতে ভিড় জমান লোকজন।

ব্যাংকগুলো ৯টায় খোলার কথা থাকলেও ১১টার সময় খোলার ফলে সেগুলোতেও বিশাল লাইন লেগে যায়। তারপরও অনেককেই খালি হাতে ব্যাংক থেকে ফিরতে হয়েছে। কারণ এতদিন বন্ধ থাকায় এবং একসঙ্গে এ গ্রাহকের চাহিদা থাকায় ব্যাংকের সিন্দুকও খালি।

লম্বা লাইন গ্যাস এবং কাঠের দোকানেও। বাজারে কোরবানির ভেড়া-ছাগল কিছু এলেও কেনার লোক নেই।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছিলেন, ঈদের আগে কাশ্মীরিদের স্বস্তি দিতে তুলে নেয়া হয়েছে ১৪৪ ধারা৷কাশ্মীরে ঈদ-১৪৪ ধারা

কিন্তু রোববার সকাল ১০টা বাজতেই হঠাৎ আগের মতোই ঘোরাঘুরি শুরু হয় পুলিশ ভ্যানের। সেখান থেকে হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা আসে: ‘এখনই সবাই বাড়ি ফিরে যান। আবারও কারফিউ শুরু হচ্ছে।’

অথচ শুক্রবারও শ্রীনগর পুলিশ বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছিল কাশ্মীরে গোলাগুলি ও সহিংসতার ঘটনা ‘গুজব’। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

কারফিউয়ের ঘোষণা হতেই মুহূর্তে উধাও হয়ে যায় ভিড়। সশব্দে দোকানপাটের শাটার বন্ধ হতে শোনা যায়। অবশ্য বাড়ি ফেরার তাড়ার মাঝেও পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গালিবর্ষণ করতে ভোলেননি অনেকে।

আনন্দবাজার জানায়, রোববার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, কাশ্মীরের মানুষ যাতে স্বস্তিতে ইদ পালন করতে পারেন তার জন্য কী কী ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছুটির দিনেও ব্যাংক খুলে রাখা হয় রোববার। ৩ হাজার ৬৯৭টি রেশন দোকানের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলি হচ্ছে। বলেও জানানো হয়।

এছাড়া আড়াই লাখ ভেড়া পাঠানো হয়েছে কোরবানির জন্য। ঈদগাহ ময়দানও তৈরি ছিল। কিন্তু আবারও ১৪৪ ধারার কারণে পশু আর কেনা হয়নি। ঈদগাহ ময়দানে বড় জমায়েতও নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো।কাশ্মীরে ঈদ-১৪৪ ধারা

এ সময় জানায়, কাশ্মীরে ১৪৪ ধারা আবারও জারি করা হলেও জম্মুতে তিন-চারটি শহর ছাড়া ১০টি জেলা থেকে কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছে। ঈদে পরিবারের সবাইকে যাতে সাধারণ মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে পারেন, তার জন্য উপত্যকার বাইরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে ৩০০টি বিশেষ টেলিফোন বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু উপত্যকা এ দিনটিও কাটাচ্ছে মোবাইল সংযোগ ছাড়া। ইন্টারনেটও নেই টানা ছ’দিন। সংবাদমাধ্যমের ওপরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে, সে খবরও কেউ জানে না। পাইকারি ও খুচরো বাজারে পণ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি ওষুধও রয়েছে স্বল্প পরিমাণে।