কাশ্মীর কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই বিখ্যাত নয়। তুষার আচ্ছাদিত পাহাড় পর্বত, নীল নদী আর আলাদা সংস্কৃতির বাইরেও অনেক কিছুই রয়েছে সেখানে। সেখানকার হরেক রকমের খাবারের স্বাদ অনেকেরই জিভে লেগে আছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কাশ্মীরের চা।
সেই চা বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এর উপাদান একেবারেই আলাদা। স্বাদে-গন্ধে চেনা চায়ের মতো নয় বরং বেশ আলাদা।
বর্তমানে কাশ্মীরের উপত্যকা ছাড়িয়ে এ গোলাপি চা পাড়ি দিয়েছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান, চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে। এমনকি, সুদূর আমেরিকার মাটিতেও ওই গোলাপি চায়ে চুমুক দিচ্ছেন অনেকে।
অনেকের কাছে তা ‘নুন-চা’। কেউ বা আবার একে চেনেন ‘গুলাবি চায়’ বলে। কাশ্মীরের স্থানীয়দের মতে, গোলাপি চা-পানে বেশ উপকারিতাও রয়েছে। এই চায়ের মূল উপকরণ বলতে গ্রিন টি, লবণ এবং বেকিং সোডা। চায়ে লবণ থাকার ফলে তা পান করলে পাহাড়ি এলাকায় ডিহাইড্রেশন কম হয়।
খানিকটা তেতো হলেও তাতে থাকে অনেকটা লবণাক্তভাব। ফলে প্রতিদিনের লিকার চা বা দুধ-চিনি দিয়ে চায়ে চুমুক দিতে অভ্যস্তদের কাছে এটি অবশ্যই অন্য স্বাদের মনে হবে।
কাশ্মীরের গোলাপি চায়ের স্বাদ যেমন অপরিচিত, তা তৈরির পদ্ধতিও আলাদা। বিভিন্ন সাময়িকীর তথ্যমতে, প্রথমে একটি পাত্রে পরিমাণমতো পানিতে গ্রিন টি এবং এক চিমটি বেকিং সোডা দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ফোটাতে হবে। বেকিং সোডার কারণেই চায়ের রং গোলাপিতে পরিণত হয়। তবে সাথে সাথে তা হয় না। গ্রিন টি-তে বেকিং সোডা দিয়ে পানি ফোটালে তা রং বদলে প্রথমে বাদামি রঙের হয়ে যায়। এর পর চায়ে গাঢ় মেরুন রং আসতে থাকে।
গোলাপি চা তৈরি করতে যেমন পাকা হাতের প্রয়োজন, তেমন এর পিছনে কিছুটা বিজ্ঞানও রয়েছে। বৈজ্ঞানিকেরা জানিয়েছেন, হালকা অ্যাসিডিক এই চায়ে অম্লরোধে সাহায্য করে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (বেকিং সোডা)। সেই সঙ্গে এর কষটে ট্যানিনের ঝাঁঝও কমিয়ে দেয়।
একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় দাবি, ‘কাশ্মীরি চায়ে পলিফেনল অনেকটা ফেনোলসালফথালেইন-এর মতো কাজ করে। যেটি ফেনল রেড বলেও পরিচিত।’ চায়ের রং বদলে বার্গন্ডি হওয়ামাত্র সেই রং ধরে রাখতে পাত্রে বরফ বা ঠান্ডা পানি ঢালা হয়। এরপর তাতে দুধ মেশালে গোলাপি রং দেখা যায়।
চায়ের রং বদল হওয়ামাত্রই সঙ্গে সঙ্গে তা পরিবেশন করা হয় না। এর পরেও চা তৈরি বাকি। তখন একটি হাতায় এই পানীয় ভরে তা চায়ের পাত্র থেকে অন্য পাত্রে বার বার উঁচু-নিচু করে ঢালা হয়। বার বার একই পদ্ধতিতে চা ঢালার ফলে তাতে বাতাস ঢুকে বেশ ফেনা ফেনা হয়ে ওঠে। অনেকটা কফি মেশিনে তৈরি কফির মতো। তখনই পরিবেশন করা হয় গ্রাহকের কাছে।
লন্ডনের এক চা-বিক্রেতার দাবি,পানীয় তৈরির পর তা হাতায় ভরে উঁচু-নিচু করে চার ঘণ্টা ধরে বার বার ঢালা না হলে এর আসল স্বাদই পাওয়া যাবে না। গোলাপি চা তৈরির বৈচিত্র্যময় পদ্ধতি ও সময়ের কারণে চা পানকারীর আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়।