গতকাল থেকে দেখছি কাশেম বিন আবু বাকার নামে এক লেখকের নামে জামায়াতি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং হেফাজতি বামদের বেশ শোরগোল চলছে। তাদের কাছে তিনি একজন বিশাল মাপের লেখক, কারণ তার চটুল মার্কা যৌবনের সুড়সুড়ি লাগানো প্রেমের উপন্যাস নাকি বিক্রি হয়েছে লাখ লাখ কপি। তাই ভাবলাম কিছু লিখি এই মহান সাহিত্যিক ভদ্রলোককে নিয়ে।
প্রথমেই ভদ্রলোকের নিজের লেখা থেকেই কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করি।
১। আসসালাম। আই লাভ ইউ। মা আসসালাম।
২। শফিক বিসমিল্লাহ বলে শফিকুনের ঠোঁটে কিস করা শুরু করলো।
৩। আপনি শরিফ ঘরের মেয়ে। আপনার জন্য আল্লাহপাক আমাকে কবুল করুন। আমিন।
৪। “সুবাহানাল্লাহ। আপনার মতো সুপুরুষ আমি জন্মের পর থেকেই আশা করেছিলাম।” এই বলেই সে স্বামীকে জড়িয়ে ধরলো।
৫। রফিকুন বোরখা পরে ডেটিং-এ যায়। কারণ বোরখা ছাড়া ডেটিং নাজায়েজ।
৬। শাকিলা তার স্বামীকে বললো, “বাসর রাতে কি করতে হয় আমি জানিনা। আমাকে শিখিয়ে দাও না গো।”
৭। শাকিল বললো, “ও আমার প্রাণের সখী। আল্লাহপাক তোমাকে কেনো এতো রূপবতী বানালেন?”
৮। “ও গো! তোমার স্থান আমার পায়ে নয় বুকে। এই বলে সে স্ত্রীকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলো।”
৯। “হাততালি দেওয়া ইহুদিদের কাজ। আমরা বলবো “মারহাবা, মারহাবা।”
১০। “এই যাও! আমার লজ্জা লাগে না বুঝি!” এই বলে আকলিমা শাড়ি ধরে রাখার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না।
১১। “বাসর রাত আল্লাহর নিয়ামত। এই রাতে লজ্জা পেতে নেই গো আমার প্রাণ সজনী।”
১২। শেষমেষ তারা শরিয়ত মোতাবেক স্বামী-স্ত্রীর মধুর মিলনে মেতে উঠলো।
(সূত্র: http://www.somewhereinblog.net/blog/Razybd/29227150)
কাশেম সাহেবের “ফুটন্ত গোলাপ” উপন্যাসটি ছাত্রজীবনে ছাত্রীসংস্থার মেয়েদের হাতে দেখেছি অনেকবার। এটি নাকি উনার সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাস। আগ্রহবশত একবার পড়ে দেখেছিলাম কিছুটা। রসময় গুপ্তের এমন চমৎকার হালাল ভার্সন এর আগে কখনোই চোখে পড়েনি। প্রথম যৌবনে বেশ ভালোমতোই সুড়সুড়ি দেয়া উপাদানে পরিপূর্ণ ছিলো বলাই বাহুল্য। আমার এক বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম তার পরপর কয়েক রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো এই মহামূল্য চটি গ্রন্থটি।
এই বইটি নিয়ে আস্ত একটা ব্লগও আছে চরম উদাস ভাইয়ের।
সূত্র: http://www.sachalayatan.com/udash/55503
বলাবাহুল্য এই বইটি ৩০ বার রিপ্রিন্ট হয় !!!!
বাংলাদেশের পাঠক সমাজের রুচির যে বিশাল উন্নতি হয়েছে তা এ থেকেই বোঝা যায় চমৎকারভাবেই। শুধুমাত্র জামায়াতী স্টাইলে প্রেম বিতরণ নয়, আরো বহুবিধ ব্যাপারে অগাধ জ্ঞান বিতরণ করেছেন তিনি কার্পণ্যহীনভাবেই উদারহস্তে।
তার কয়েকটি নমুনা:
“গান গাওয়া হারাম, তবে উর্দু গজল গাওয়া যেতে পারে।”
“বিয়ের আগে বেগানা পুরুষের সাথে ঘোরাফেরা করা ঠিক না, তবে আপাদমস্তক বোরকা পরে প্রেম করা হালাল।”
“চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া আর চলবে না যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সঃ) মেঝেতে দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন।” – আচ্ছা গাড়িতে বা ট্রেনে চেপে অফিসে যাওয়া কি ঠিক হবে নাকি কালই একটা উট কিনে ফেলবো?
“আনন্দ প্রকাশের জন্য হাততালি দেয়া মুসলমানদের রীতি না, আনন্দ প্রকাশের জন্য বলতে হবে মারহাবা, মারহাবা অথবা সুবহান আল্লাহ।”
“পুরুষদের রাত জেগে কারো সেবা করা ঠিক না, এতে শরীর ভেঙ্গে যায়। এই কাজের জন্য আল্লাহপাক মেয়েদের সৃষ্টি করেছেন।”
“বিয়ের আগে চাকরী করলেও বিয়ের পর মেয়েদের চাকরী করা ইসলাম সম্মত না। বিয়ের পর একমাত্র কাজ স্বামীর সেবা করা।”
“অবিবাহিত অবস্থায় কোন লম্পটের পাল্লায় পড়ে শ্লীলতাহানি হলেও, পরে ওই লম্পটকে খুঁজে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করাই মেয়েদের জন্য মঙ্গল।”
কাশেম সাহেবের গুণমুগ্ধ ভক্তশ্রেণীর দাবি অনুযায়ী লেখার মানের চেয়েও কাশেম সাহেব তাদের দৃষ্টিতে বড় লেখক হওয়ার অন্যতম কারণ উনার একটি প্রেমের উপন্যাস নাকি ৪ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যান তারা পেয়েছেন কোত্থেকে তা কিন্তু কেউ ভুলেও উল্লেখ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে, এই পরিসংখ্যানের দৌড় তাদের এই ফেসবুক পোস্ট পর্যন্তই। যাই হউক পৃথিবীর সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের একটি তালিকা দিলাম তাদের জন্যই। সাথে বিক্রিত বইয়ের পরিমাণও।
1. A Tale of Two Cities – 200 million
2. The Lord of the Rings – 150 million
3. The Little Prince – 140 million
4. Harry Potter and the Philosopher’s Stone – 107 million
5. And Then There Were None – 100 million
6. She: A History of Adventure – 100 million
7. Dream of the Red Chamber – 100 million
8. The Lion, the Witch, and the Wardrobe – 85 million
9. The Da Vinci Code – 80 million
10. Think and Grow Rich – 70 million
(সূত্র: http://list25.com/25-best-selling-books-in-history/5/)
পরিশেষে সমাপ্তি টানি বাংলা সাহিত্যের আকাশে কিংবদন্তী জনপ্রিয়তার অধিকারী অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের একটি কাহিনী থেকে। শরৎচন্দ্রের আমলে তাঁর বই বিক্রি হতো হাজার হাজার কপি। কিন্তু রবিঠাকুরের বই বিক্রি হতো কয়েকখানা মাত্র। তো এই ব্যাপারে তাঁর এক ভক্ত তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সহাস্যে উত্তর দিয়েছিলেন,“আমি লিখি তোমাদের জন্য, আর রবীন্দ্রনাথ লেখেন আমাদের জন্য” পার্থক্যটা এখান থেকেই বোঝা যায়। আর বইয়ের সংখ্যা দিয়ে যারা লেখকের মান নির্ধারণ করেন তাদের জন্য রইলো হুমায়ুন আজাদ স্যারের সেই মোক্ষম বাণী, “ইতর প্রাণী প্রসব করে বেশী”।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)