অভিমানের কারণে কালিকাকে আমার স্মরণ করতে ইচ্ছা করে না—এভাবেই কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণ শুরু করলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। কালিকার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘কালিকা ছিলেন আমার লোকগানের শিক্ষাগুরু। আজ এমন একটা কারণে এখানে আসতে হবে ভাবিনি। তিনি বাংলা আর বাংলা ভাষাকে কখনো আলাদা ভাবেননি।’
এরপর কালিকার স্মরণে অশ্রুসজল চোখে গেয়ে শোনান কালিকার পছন্দের গানের দুটি চরণ, ‘ঠিক যেখানে দিনের শুরু ঠিক সেখানে অন্ধকালো রাত্রি শেষ’।
অন্যদিকে দিনের আলো যখন শেষ হতে চলেছে, ঠিক তখনই দশর্কদের পদচারণায় কানায় কানায় পুর্ণ হতে শুরু হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা। শুধু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষই নয়, কালিকা প্রসাদকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সংস্কৃতিমনা মানুষও। শুরুতেই বাঁশি আর একতারার সুরে কালিকা প্রসাদকে স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সবার মাঝে উপস্থিত হন সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গন এবং সংস্কৃতিমনা সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে কালিকাপ্রসাদের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। একে একে মূল অনুষ্ঠানস্হলে প্রবেশ করেন। এরপর কালিকাপ্রসাদের কাছের মানুষরা মঞ্চে একে একে স্মরণ করেন তাকে।
‘কালিকা ছিলেন বাঙ্গালি, শিল্পী এবং আপাদমস্তকই একজন মানুষ। তিনি আসাম পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ভারতের নন, তিনি বাঙ্গালির এবং সমগ্র মানবজাতির।’ বললেন সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।
কালিকাকে স্মরণ করে তার স্ত্রী ঋতুচেতা গোস্বামী বলেন, ‘কালিকা চেয়েছিলেন একটি সুরের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে, তার এই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’ তাকে আরও স্মরণ করেন শিল্পী চন্দনা মজুমদার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘কালিকা প্রসাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় না থাকলেও তার শুণ্যতা অন্য সবার মত আমাকেও ছুঁয়ে গেছে।’
এরপর কালিকাকে স্মরণ করে একে একে সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া থেকে আসা বাউল শিল্পীরা এবং জলের গান। এছাড়া আরও গান গেয়েছেন শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়। কালিকাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সব শিল্পীদের গানের সাথে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছে জলের গান। এছাড়া অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে কালিকাপ্রসাদকে নিয়ে তৈরি নানা ডকুমেন্টারিও দশর্কদের দেখানো হয়। অনুষ্ঠানের সবশেষে গান করেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। দশর্কদের তিনি গেয়ে শোনান তার জনপ্রিয় গান ‘বেণীমাধব’। এরপর সমাবেত সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
ছবি : সাকিব উল ইসলাম