কারিগরি দক্ষতা ও উন্নত প্রযুক্তির অভাবে বাংলাদেশ থেকে অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম)।
বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএমে ‘মানিলন্ডারিং ভালনারেবিলিটিস ইন নিউ পেমেন্ট সিস্টেমস: বাংলাদেশ কনটেক্সট’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে এই তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ট্রেনিং) ড. শাহ মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বিআইবিএমের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দিন দিন ক্যাশলেস (নগদ টাকা ছাড়া) পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাতে ঝুকিও বাড়ছে। তবে বিশ্বের অনান্য দেশের মতো ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ঝুকি ব্যবস্থাপনায় উপযুক্ত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তি এখনও বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। তাই তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের অর্থপাচার ঠেকাতে ব্যাংকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মোবাইল অপারেটরদের একযোগে কাজ করতে হবে।
বিআইবিএমের গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ ব্যাংকই মনে করে অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের পেছনে ভূমিকা রয়েছে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কারিগরি দক্ষতা না থাকা। আর ৪১ শতাংশ ব্যাংক উন্নত প্রযুক্তির অভাবকে দায়ী করেছে।
এছাড়া ২১ ও ১৮ শতাংশ ব্যাংক নজরদারির অভাব ও দ্রুত লেনদেনকে অর্থপাচারে দায়ী করেছে।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অর্থপাচার প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও জনশক্তি নেই। এদিকে নজর দিয়ে ব্যাংকারদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা আইটি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে শুধু আইটি অফিসারদের নয়, পুরো ব্যাংকিং খাতের কর্মীদের আইটি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইটিতে অনেক এগিয়ে বলে অন্য ব্যাংক তার সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, আইন করার সময় ব্যাংকিং অপারেশনে যেন কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকটি বিবেচনায় রাখতে হবে। সুতরাং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মাঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহক এবং ব্যাংকার ও এজেন্টদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে গতি বাড়লেও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা চালু হয়নি। এটা রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দোহাই না দিয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস. এম মাঈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানব সম্পদকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি এনবিআর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিবার্চন কমিশন, আইসিটি মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক লিলা রশীদ বলেন, মোট লেনদেনের ৬ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক এ ধরণের ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করলে দ্রুত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
আইপে সিস্টেম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা জাকারিয়া স্বপন বলেন, বাংলাদেশে ই-আর্থিক সেবা চালু করতে গেলে অনেক হয়রানি হতে হয়। তবে নন ব্যাংক পেমেন্টের অনেক সুযোগ রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে অনেক কম সেবা দিতে পারছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য নতুন পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।