কানাডায় গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর রমজানের ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। কানাডার আলবার্টায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহারের উপর বাধ্যতামূলক শিথিল করায় পুরো আলবার্টা যেন নতুন করে জেগে উঠেছে। শুধু আলবার্টা নয়, এ চিত্র এখন পুরো কানাডার।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শনিবার ২ এপ্রিল কানাডায় শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। মাল্টিকালচারালিজমের দেশ কানাডায় বিভিন্ন দেশের লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এরমধ্যে প্রচুর সংখ্যক মুসলমানও রয়েছেন।
শুক্রবারের জুম্মার নামাজে দেখা গেছে প্রচুর সংখ্যক মুসল্লির সমাগম ঘটেছে মসজিদে। মুসুল্লিরা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। মসজিদ গেটের সামনে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে পসরা সাজিয়ে বসেছে আতর আর জায়নামাজের দোকানগুলো। মাসব্যাপী রোজা রাখার সময়-সূচি সম্বলিত রমজানের ক্যালেন্ডারও অনেকের হাতে।
ক্যালগ্গরির গ্রোসারির দোকানগুলোতে প্রবেশপথেই রমজানের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার, জুস, ছোলা বেসনসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খাবার সমৃদ্ধি প্রস্তুতি দেখা গেছে। রমজান মাসের আগমন দোকানে প্রবেশ করলেই তা সহজেই অনুমেয়। কানাডার স্থানীয় বড় বড় স্টোর এবং বিভিন্ন দেশের স্টোর গুলিতেও রমজানকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে বড় করে মাহে রমজান সম্বলিত পোস্টার লেখা রয়েছে যা ক্রেতাদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
প্রবাসী বাঙালিরা ছুটির দিনসহ কর্মময় দিনগুলিতেও পরিবার পরিজন নিয়ে আসছে রমজানের বিশেষ আইটেমগুলো কিনতে। প্রবাসী বাঙ্গালীদের মালিকানায় গ্রোসারি গুলো যেন বাংলাদেশের মতোই বাংলাদেশী পণ্য দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে।
রেস্টুরেন্ট মালিক সালেকুর রহমান সিদ্দিকী (রাজন) জানান, বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের চাহিদার সাথে মিল রেখে আমরা পণ্য সরবরাহ করেছি, এখানে ইফতার আইটেম সহ সব ধরনের পণ্য পাওয়া যাবে। আসছে রমজান মাসে ক্রেতা সাধারণের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি কম্পিটিটিভ প্রাইস এর প্রতি যাতে করে সবাই সুন্দর ভাবে পবিত্র রমজান মাস পালন করতে পারি।
পবিত্র রমজান মাসে বাংলাদেশের মত এখানেও বাঙালিরা ছোলা মুড়ি মেখে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির অপেক্ষায় থাকে। ইফতারের আয়োজনে থাকে পেয়াজি, কলা, আলুর চপ, জিলাপি,খেজুর, চিকেন হালিম আর শরবত। বিশেষ খাবার হিসেবে কমলা, আঙুর, আপেলসহ নানা দেশের বৈচিত্রময় ফল। বাংলাদেশি হোটেলগুলোতে ইফতারিসহ খিচুরি ও বিরিয়ানির জমজমাট বেচাকেনা চলে।
তারাবির নামাজের সময় যখন ছোট ছোট শিশু কিশোররা অভিভাবকদের সাথে মসজিদে আসে। স্বাস্থ্যবিধির শিথিলতার কারণে এই বছর নতুন করে জেগে উঠবে মুসল্লিদের তারাবির নামাজ।
গত দু’বছর কোভিড-১৯ এর কারণে গৃহবন্দি আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মসজিদের রূপ ভিন্ন আকার ধারণ করেছিল। দূরত্ব বজায় রাখা আর সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানতে যেয়ে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল ধর্মীয় রীতিনীতি। কিন্তু এ বছর তার পুনরাবৃত্তি আর হচ্ছে না।
এরোমা ইন্টারন্যাশনালর চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আতিকুল ইসলাম কলিন্স জানান, মসজিদে গত দু’বছর যাবৎ আমরা বাংলাদেশের আমেজে ইফতারি এবং তারাবির নামাজ আদায় করতে পারিনি। এই অবস্থা থেকে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের পরিত্রাণ করেছেন, এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। দোয়া করি তিনি পবিত্র রমজান মাসে সারাবিশ্বের মানুষকে যেন হেফাজত দান করেন এবং আগের মত রমজান পালন করার তৌফিক দান করেন।
সিয়াম সাধনার মাসে সংযম আর আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে যাবতীয় ভোগ বিলাস, অন্যায়, অপরাধ, হিংসা, বিদ্বেষ, সংঘাত পরিহার করে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে বয়ে নিয়ে আসবে শান্তির বার্তা কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের এমনটাই প্রত্যাশা।