রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এ তিন পার্বত্য জেলার ২ লাখ হেক্টর পতিত জমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ করলে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। আর সম্ভানাময় এ খাতে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পার্বত্য জেলায় ২ হাজার কফি ও কাজুবাদামের বাগান করার বিস্তারিত জানান চট্টগ্রামের এ খাতের একমাত্র শীর্ষ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তানভীর।
তিনি মঙ্গলবার বিকেলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এর ভবিষ্যত সম্ভাবনাময়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে। পরে কাজু বাদামের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে এই মন্ত্রণালয়গুলো এক সাথে কাজ করবেন বলে জানান এই তিন মন্ত্রী।
সূত্র জানায়, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এ তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত ৫ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ করলে বছরে এক বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। আর এই ২ টি ফসল হতে পারে দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকশিল্পের বিকল্প রপ্তানি আয়ের উৎস। এছাড়া এই প্রকল্প নেয়া হলে পাহাড়ি এলাকার প্রায় ২ হাজার পরিবার কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে।
এই ফসল উৎপাদনে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট কৃষককে কফি ও কাজুবাদাম উৎপাদন, চাষ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া কফি ও কাজুবাদামের চারা সরবরাহ করা হবে বিএডিসি, হর্টিকালচারাল সেন্টার থেকে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট ৩৫ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরিকোস্ট, নাইজেরিয়া, ঘানা ও বেনিনে। এসব দেশে প্রায় ১২ লাখ টন উৎপাদন হয়। কিন্তু এসব দেশ কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না। তারা মাত্র ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে। এসব দেশের কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করে ভিয়েতনাম।
সারা বিশ্বে কাজুবাদামের বাজার ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই ৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। বাকিগুলো ভারত ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে রপ্তানি হয়। কাজুবাদামের বড় গ্রাহক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। এছাড়া ভারতের কেরালায়ও এই বাদামের ব্যাপক চাষ হয়।
কাজুবাদাম চাষ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কাজুবাদাম চাষ করে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় করছে ভিয়েতনাম। পার্বত্য চট্টগ্রামেও কফি-কাজুবাদাম চাষ করা হবে। এর চাষপদ্ধতি শেখানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কৃষকদের ভিয়েতনামে পাঠানো হবে। কফি ও কাজুবাদামের চাষ এগিয়ে নিতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে চারা।
কৃষি সম্প্রসারণে ভিন্নতা এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধু পোশাক শিল্প নিয়ে থাকলে হবে না। ভিন্ন ভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতে হবে। পোশাকের বিকল্প হতে পারে কাজুবাদাম। এক সময় ভিয়েতনামে কাজুবাদাম চাষই হতো না। এখন সেখানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হয়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে। আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষির বহুমুখিকরণের মাধ্যমেই কৃষির উন্নয়ন সম্ভব। আমরা দানাদার ফসলে সয়ংসম্পূর্ণ। চাহিদার চেয়ে আলু বেশি উৎপাদন করছি। এখন উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ফসল রপ্তানির জন্য কাজ করছি।
অপ্রচলিত ফষলের দিকে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী হওয়ার পর ৬ হাজার কাজুবাদাম চারা এনেছি। এগুলো কৃষকে দেয়া হয়েছে।
কাজুবাদাম প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এতে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমার কাছে এ বিষয়ে প্রকল্প এলে অনুমোদনের ব্যবস্থা নেবো। যাতে পাহাড়ে এর চাষ সম্প্রসারণ করা যায়।
আর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কাজুবাদাম রপ্তানি ও উৎপাদন কাজ এগিয়ে নিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস কিছুটা সুবিধা দিলে কাজুবাদাম ব্যাপক সম্ভাবনাময় কৃষি রপ্তানিপণ্য হবে। অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও সম্ভব।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডেইলপাড়ায় ১০ বছর আগে দেশের প্রথম কাজুবাদামের কারখানা ‘গ্রিনগ্রেইন কেশিও প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি’ গড়ে তোলেন তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ তানভীর।
তিনি পাহাড়ের কাঁচা কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত থেকে শুরু করে কারখানা নির্মাণ ও দেশি কাজুবাদামের সাফল্যের গল্প শোনান তিন মন্ত্রীকে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে সাড়ে ৩ হাজার কেজি কাজুবাদাম রপ্তানি করেন বলে জানান শাকিল। যার বাজারমূল্য ২৩ হাজার ডলারের বেশি। সাফল্যের এই গল্প শোনানোর পাশাপাশি রপ্তানি ও উৎপাদন কাজের কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
জানা গেছে, কাজু বাদামের মূল চ্যালেঞ্জ পোস্ট প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ। বাংলাদেশে সেভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো মেশিন নেই, যাতে পোস্ট প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায়। তাছাড়া সংরক্ষণও কেউ ঠিকমতো জানতো না। এটি এমন একটি ফল যেটি কাঁচা বেশি খেতে পারবেন না। ফলটি হয় দুই স্তরে। উপরের অংশটুকু মোটা। নিচের অংশে বাদাম। এর ভিতরে এক ধরনের আঠাজাতীয় জিনিস থাকে। এটা মুখে বা হাতে লাগলে ঘা হতে পারে। আবার উপরের অংশটি প্রসেস করতে পারলে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল পাওয়া সম্ভব। এর পুষ্টি গুণও রয়েছে প্রচুর।