বুধবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এ সময় কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র সরকার তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে, তাকে (খালেদা জিয়া) রাজনৈতিক হয়রানি করতে, বিপন্ন-বিপর্য্স্ত করতে এই মিথ্যা বানোয়াট মামলা করেছে। উদ্দেশ্য একটাই আমি তাকে জোর করে হলেও শাস্তি দেবো, অন্য কিছু নয়।’
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, অবরুদ্ধ করে তার (খালেদা জিয়া) সন্তানের লাশ তার কাছে পাঠানো হয়েছিলো। সেই লাশ সমাহিত করা এবং তার জন্য যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেটা করতে পারেননি আমার নেত্রী। এতো উৎপীড়ন, এতো অত্যাচার করেও তাদের প্রতিহিংসার পাখনা যেন আরো বেশি করে ছটফট করছে। এই পরিস্থিতির পর কালকে আরেকটি কী নাটক অপেক্ষা করছে তা আমরা জানি না।
এসময় তার পাশে থাকা দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামসহ অন্যরাও কাঁদতে থাকেন।
রিজভী অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশে এই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘এই রকম এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে আমরা রাজনীতি করছি। আমাদের কোনো ঘুম নেই, আমাদের কোনো শান্তি নেই। প্রতিনিয়ত ভয় ও শঙ্কার মধ্যে আমাদের দিনরাত্রি পার হচ্ছে।’
তিনি বলেন: ‘সারাদেশে আমাদের তৃণমূল নেতা-কর্মী ঘরে থাকতে না পেরে বাঁশ ঝাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে, দীঘিনালার পাশে গিয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছে। ঝোঁপ-ঝাড়ে গিয়েও আশ্রয় নিচ্ছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র, ওবায়দুল কাদের সাহেবদের গণতন্ত্র।’
এ সময় সদ্য আটক স্বেচ্ছাসেবক মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতা-কর্মীর অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানান রিজভী।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ নেতৃবৃন্দের বাসায় পুলিশি তল্লাসীর নিন্দা জানান তিনি।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন; ‘আজকে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। কী রায় হবে না হবে, মনে হচ্ছে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে একটা কারফিউ জারি করা হয়েছে, সেই কারফিউর মধ্যে সবাইকে বসবাস করতে হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেলে খালেদা জিয়া সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে ‘বানোয়াট ও মিথ্যা’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখান করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করলো না টেলিভিশনগুলো, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘এ থেকে জেড পর্যন্ত’ লাইভ দেখানো হলো- হায় এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র।’