ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী রোববার সকাল সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত জনতা কারফিউ (জনতার জন্য জনতার দ্বারা) জারি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বৃহস্পতিবার ভারতের স্থানীয় সময় রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ কথা জানান।
নরেন্দ্র মোদি বলেন: বর্তমান প্রজন্ম পুরনো কথা জানে না। ছোটবেলায় যুদ্ধের সময় গ্রামের পর গ্রাম ব্ল্যাকআউট করে দিত। গ্রামে গ্রামে অন্ধকার করে দেওয়া হতো, বন্দরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হতো। যুদ্ধ না হলেও পরীক্ষামূলক ভাবে এক-দু’দিন ‘ব্ল্যাকআউট’ করা হত। কাঁচে কালো কাগজ লাগিয়ে দিত। লোকে পাহারা দিত। আর এজন্য আমি আজ প্রত্যেক দেশবাসীর কাছ থেকে একটা সাহায্য চাইছি। তা হলো জনতা কারফিউ। জনতার জন্য জনতার দ্বারা কারফিউ। ২২ মার্চ রোববার সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে কেউ রাস্তায় বেরোবেন না। পাড়ায় বেরোবেন না।
তিনি বলেন: সরকারি কর্মী, বিমানবন্দরের কর্মী, সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা নিজেদের কথা না ভেবে অন্যের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা পুরো জাতি হাততালি, ঘণ্টা বাজিয়ে রোববার বিকেল পাঁচটায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। এই দিন আমরা সবাই একে অন্যকে ধন্যবাদ দিবো। কারণ এরা সবাই বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ করছেন।
মোদি বলেন: বহু মানুষকে আইসোলেশনে রেখে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা হচ্ছে। করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে এমন কোনও নিশ্চিত ওষুধ তৈরি হয়নি, কোনও টিকা তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সবার দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
সব ভারতীয়কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন: ৬০ বছরের বেশি বয়সের প্রবীণরা ঘর থেকে বের হবেন না। বাকি দেশবাসীও ঘরে থাকার চেষ্টা করুন। আমাদের সবার উচিত সতর্ক থাকা, আপনারা এদিক সে দিক ঘুরে বেড়াবেন, আর করোনা থেকে বাঁচবেন, এটা সম্ভব নয়। আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা নিজেরা সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচব, অন্যদেরও বাঁচাব।
তিনি বলেন: আমরা অবশ্যই এই মহামারী থেকে নিরাপদ নই। তাই কারোর আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। গত দুই মাস ধরে ভারতের ১৩০ কোটি মানুষ এই মহামারীর একসাথে লড়াই করছে। বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে পৃথিবী। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও বিশ্বের এতগুলো দেশ আক্রান্ত হয়নি। সারা বিশ্ব করোনা নিয়ে সঙ্কটে রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির ভাষণের কয়েক ঘণ্টা আগে করোনা ভাইরাসের কারণে ২২ মার্চ থেকে ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সকল অবতরণ শাটডাউনের ঘোষণা দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক এবং সরকারি কর্মচারি ছাড়া বাকি ৬৫ বছরের উর্ধ্বে সব ব্যক্তিকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১০ বছরের নিচে শিশুদেরও বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়।
ভারতজুড়ে স্কুল, কলেজ, সিনেমা হল, শপিং মলসহ বিভিন্ন জমায়েতপূর্ণ এলাকা বন্ধ রাখা হয়েছে। ধর্মীয় জমায়েত এবং বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। মুম্বাইসহ সব এলাকায় ৫০ জনের বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতে নতুন করে ১৮ জন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে এখনও পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি। ইটালিতে প্রায় ২৮ হাজার।