করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সারাদেশে যখন অঘোষিত ‘লকডাউন’ চলছে, মানুষ হয়ে পড়েছে ‘গৃহবন্দী’ তখন রাজধানীবাসী নিত্যপণ্য কেনায় অনলাইনে ভার্চুয়াল সুপার শপকে বেছে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অনলাইনে খাবার অর্ডারের পরিমাণও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন। তাই অনলাইনে কেনাকাটা করছেন তারা। এরপর হোম ডেলিভারির মাধ্যমে পণ্যগুলো তাদের বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে।
সর্বশেষ খবরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলছে, দেশের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ জন। যাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অন্তত ১৫ জন।
এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন সব ধরনের অফিস-আদালত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেশবাসীকে ঘরে অবস্থানের অনুরোধ করেছে।
এমন সময়ে অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন, ধানমন্ডির একজন বাসিন্দা রেবেকা আহসান।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকেই কেনাকাটা অনলাইনের মাধ্যমে করছি। চাল-ডাল থেকে শুরু হরেক রকমের প্রয়োজনীয় জিনিস অনলাইনের গ্রোসারি শপ থেকেই বর্তমান পরিস্থিতিতে কিনছি।’
‘‘তবে উদ্ভূত পরিস্থিতে অনলাইন থেকেও অনেক গ্রাহক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে পারছিন না। কারণ ওই পণ্যের স্টক শেষ হয়ে গিয়েছে।’’- যোগ করেন তিনি
গুলশানের বাসিন্দা নাদিয়া রহমান বললেন, ‘বাসার বাইরে বের হচ্ছি না, গতকাল থেকে বেশ কয়েকটি অনলাইনে ডেটল লিক্যুইড খুঁজেছি, কিন্তু সব জায়গাতেই আউট অব স্টক দেখিয়েছে।’
তার পাশের এলাকা উত্তরার বাসিন্দা মৌটুসী ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল ফিশঢাকা নামের একটি অনলাইন থেকে বেশকিছু মাছ কিনেছি। এছাড়াও বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য দ্রব্যাদিও অনলাইন থেকেই কিনছি।’
দেশের প্রথম সারির গ্রোসারি শপ মীনা বাজারের মীনাক্লিকের কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে জরুরি অবস্থায় মীনাক্লিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যে প্রচুর অর্ডার আসছে। যার ফলে আমাদের কিছু পণ্য স্টক আউট হয়ে পড়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। খুব শীঘ্রই আমরা গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম পণ্য দ্রব্যাদি স্টকে নিয়ে আসব।
মীনাক্লিক বলছে, পুরো বিশ্বের এই সংকটময় অবস্থায় নিরাপদ থাকতে সবার সমান সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই আমরা গ্রাহকের নিরাপত্তায় অর্ডার করা প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যাদি পৌঁছে দিচ্ছি।
দেশের আরেক অন্যতম গ্রোসারি শপ চালডালডটকমের কলসেন্টার প্রতিনিধি সুরাইয়া আক্তার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা গ্রাহকেদের কাছ থেকে এই মুহূর্তে প্রচুর চাহিদা পাচ্ছি। গ্রাহকরা সবসময়ই আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখনও আছেন। আমরা তাদের অর্ডার যত্নসহ হোম ডেলিভারি করছি। আমাদের ডেলিভারি পার্সনরা সুরক্ষিত পোশাকে সেসব পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে।’
ডেলিভারি পার্সনদের চলাচলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা আমাদের সম্পর্কে জানেন, আমরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতেও হোম ডেলিভারি দিচ্ছি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সুরাইয়া বলেন, ‘গ্রাহকদের দ্রুত সময়ে সেবা দেয়ার প্রয়োজনে আমরা এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দিচ্ছি। কিন্তু গ্রাহকের প্রচুর চাহিদার জন্য ইতিমধ্যে আমরা নতুন বেশ কিছু ডেলিভারি পার্সন নিয়োগও দেয়া হয়েছে।’
ফিশঢাকাডটকমের স্বত্বাধিকারী আয়েশা সিদ্দিকা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: রাজধানীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় আমি নিয়মিত মাছের ডেলিভারি দিলেও করোনা পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র উত্তরাতেই মাছের ডেলিভারি দিচ্ছি।’
এই সময়ে রুই মাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীর কোরাল ছয়’শ টাকা থেকে শুরু, দুই কেজির ওপর থেকে সাত’শ, চার কেজির বেশি হলে নয়’শ টাকা। নদীর রুই মাছ তিন থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’
খাবার যাচ্ছে ঘরে ঘরে
রাজধানীর শেকেরটেকের বেসরকারি চাকরিজীবী ফাহিম রহমান সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর বাসা থেকেই অফিস করছেন। অফিসের কাজের ফাঁকে নিজের রান্না তাকেই করতে হয়। কিন্তু সব সময় রান্না না করে পছন্দের খাবার ‘উবার ইটস’ কিংবা ‘ফুড পান্ডা’ থেকে অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসছেন।
ফাহিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অন্যদিনের মতো এখন কিন্তু পছন্দের খাবারের সব কিছু পাবেন না। নির্দিষ্ট সংখ্যক রেস্টুরেন্ট খোলা, গতকাল যেমন আমি পিৎজা অর্ডার করেছিলাম।’
আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোর অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উবার তাদের ওয়েবসাইটে ফুড ডেলিভারি সার্ভিস ‘উবার ইটস’ এ জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি গ্রাহকদের জন্য তারা নিরবচ্ছিন্ন খাবারের সেবা নিশ্চিত করতে চায়।
ওষুধ ও নিত্যপণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে ই-ক্যাব
দেশের এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করছে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
ই-ক্যাবের মাধ্যমে চালডালডটকম, দারাজ, ইভ্যালি, ফুডপান্ডা, সহজ, পাঠাও, সেবা এক্সওয়াইজেড, ডায়বেটিক স্টোর, সিন্দাবাদ, পিকাবো, মিনা ক্লিক, জাদরো ও ঘরে বাজারসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানি তাদের জরুরি নিত্যপণ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও ই-ক্যাবের মাধ্যমে জরুরি লজিস্টিক সেবা বিদ্যুৎ, ই-কুরিয়ার, পেপারফ্লাই, সুন্দরবন, রেডেক্স, স্টিডফাস্ট ও সি এক্সপ্রেস অব্যাহত রাখছে।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ‘আমরা বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি লিখে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি, যাতে আমাদের সদস্য কোম্পানিগুলো জরুরি ওষুধ ও নিত্যপণ্য ডেলিভারির কাজ করতে পারে ‘
‘‘এছাড়া আমরা এটুআই, একশপ, ক্যাবিনেট ডিভিশন, আইসিটি ডিভিশনের সঙ্গে প্রণীত যৌথ নিরাপত্তা নির্দেশনাও সরবরাহ করেছি। যাতে লজিস্টিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সাধারণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধান করতে পারে।’’