বাংলাদেশে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। মে-জুন মাসে কিছুটা কমে আসলেও আবারও সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকাযসহ দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনার আরেকটি ঢেউ আঘাত হানার আশংকা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সেটি কতটা সামাল দিতে পারবে সেটি নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট উদ্বেগ। এক মাস আগেও শনাক্তের হার সাত শতাংশে নেমে আসলেও এখন সেটি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ পার করে ১৫ শতাংশের বেশি। বৃহস্পতিবার ১৭ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় (অ্যান্টিজেন টেস্টসহ) ২৪ হাজার ৮৭১টি নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ৮৪০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৬৩ জনের মৃত্যুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৪৫ জনে।
বাংলাদেশের উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় করোনা ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখনও ৪০ শতাংশের উপরে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে সেসব জেলায়। গত ১৫ দিনে শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় দেড়শ’র বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
এই সংক্রমণের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের ভারত ভ্যারিয়েন্ট (বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭) বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করছেন। ভারতে প্রতিদিনই করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে দেশেও ইতিমধ্যে বহু মানুষ এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপের বিশেষজ্ঞদের ধারণা ও গাণিতিক বিশ্লেষণ হচ্ছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পিক বা সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে পারে, যখন দিনে হয়তো ১০ হাজারের মতো শনাক্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতির সম্ভাব্য চিত্র গত ৩০ মার্চ সরকারের কাছে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ। করোনা পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার ওয়েবসাইট দেখলেও আসন্ন ঢেউয়ের লক্ষণও বোঝা যাচ্ছে অল্প অল্প করে। সামাজিক মাধ্যমেও আসতে শুরু হয়েছে মৃত্যুর খবর প্রচারের ট্রেন্ড! পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ দিকে যাচ্ছে বললে ভুল হবে না।
কাগজে কলমে লকডাউন বা বিধিনিষেধ থাকলেও দেশের সর্বত্র কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রক্রিয়া এক হাস্যকর পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। করোনার ভ্যাকসিন সঙ্কট নতুন বিষয় না, সরকার চেষ্টা করছে গণ ভ্যাকসিনেশনের কাজ আবারও শুরু করতে। ভারত থেকে ভ্যাকসিন আসা বন্ধ হলেও চীন ও রাশিয়ার ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে দেশ। সরকার আগামী জুলাই মাস থেকে আবারও কোভিড-১৯ এর গণটিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না ভ্যাকসিন সহজলভ্য হচ্ছে, ততোক্ষণ স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে বা মানাতেই হবে। গতবছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর বিষয়েও নজরদারি একান্ত জরুরি। তাহলেই হয়তো করোনার সম্ভাব্য ঢেউ মোকাবিলা করা আমাদের জন্য সহজ হবে।