গবেষক মনিকা গান্ধী যখন করোনভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করছিলেন, তখন তিনি অনেক সংখ্যক মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন যাদের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই।
বোস্টনের গৃহহীনদের আশ্রয়স্থলে ১৪৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলো কিন্তু তাদের ৮৮ শতাংশেরই কোনো লক্ষণ ছিলো না। স্প্রিংডেল শহরের টাইসন ফুডস পোল্ট্রি প্ল্যান্টে ৪৮১ জন এই ভাইরাস আক্রান্ত ছিলো কিন্তু তাদের ৯৫ শতাংশেরই কোনো লক্ষণ ছিলো না।
আরকানসাস, নর্থ ক্যারোলিনা এবং ভার্জিনিয়ার কারাগারে ৩২৭৭ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সেখানেও উপসর্গবিহীন ছিলো ৯৬ শতাংশ।
গত সাত মাসের তাণ্ডবে এই ভাইরাস প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৭ লাখেরও বেশি মানুষের। তাহলে কেন এই ভাইরাসটি বড় অংশের শরীরে কোনো আচড়ও কাটেনি সেই বৃহত্তর রহস্য নিয়েই ভাবতে শুরু করেন মনিকা।
এসব উপসর্গবিহীন ব্যক্তি যারা গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়াদের পাশাপাশিই বসবাস করেছেন, কী তাদের সুরক্ষা দিয়েছে তা ভেবেই আশ্চর্য তিনি। তাদের ভাইরাল এক্সপোজারের ‘ডোজে’ কি কোনও পার্থক্য রয়েছে? এটা কি জ্বিনগত? নাকি কিছু মানুষের ইতিমধ্যে ভাইরাসের প্রতি আংশিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে? আশা করা হচ্ছে এটা বুঝতে পারলেই ভ্যাকসিন ও থেরাপির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক-রোগ বিশেষজ্ঞ মনিকা গান্ধী বলেন, উচ্চ মাত্রায় উপসর্গবিহীন সংক্রমণ ভাল জিনিস। এটি ব্যক্তির পক্ষেও ভাল এবং সমাজের জন্যও ভাল।
করোনাভাইরাস অনেকগুলো প্রমাণ রেখে গেছে তার মধ্যে একটি হলো শিশুদের শরীরে খুব হালকা প্রভাব।
এইসব সূত্রগুলি বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত করছে। কেউ রিসেপ্টর কোষগুলির ভূমিকা অনুসন্ধান করছে, যা ভাইরাস দেহে অনুপ্রবেশ করার জন্য ব্যবহার করে। সেখানে বয়স এবং জিনের ভূমিকা কতটা তা আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। অন্যরা মুখোশের দিকে ঝুঁকছেন এবং সেগুলো যথেষ্ট পরিমাণে ভাইরাসের ফিল্টার করতে পারছে কিনা যাদের হালকা লক্ষণ আছে বা নেই তাদের জন্য সেটাও ভাবা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহে যে তত্ত্বটি সবচেয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে তা হলো আমাদের মধ্যেই এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যাদের ইতিমধ্যে আংশিক প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে।
তবে মনিকার গবেষণা বলছে মাস্ক পরাদের মধ্যে উপসর্গবিহীন হওয়ার প্রবণতা বেশি। দুটি ক্রুজ জাহাজের একটি ডায়মন্ড প্রিন্সেসে মুখোশ ব্যবহার করা হয়নি। সেখানে ভাইরাস মুক্তভাবে ছড়ানোর সুযোগ পায়। সেখানে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ উপসর্গবিহীন এবং অ্যান্টার্কটিকে থাকা আর্জেন্টিনা ক্রুজ জাহাজে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে প্রাদুর্ভাব ঘটে। সেখানে সমস্ত যাত্রীদের জন্য সার্জিকাল মাস্ক এবং ক্রুদের জন্য এন৯৫ দেওয়া হয়েছিলো সেখানে ৮১ শতাংশ উপসর্গবিহীন ছিলো।
একইভাবে ইন্ডিয়ানার পেডিয়াট্রিক ডায়ালাইসিস ইউনিট, ওরেগনের একটি সামুদ্রিক খাবারে প্ল্যান্ট এবং মিসৌরিতে একটি হেয়ার সেলুনে উপসর্গবিহীন সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিলো, সেসব জায়গাতেই মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেছিলো। সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম এবং চেক প্রজাতন্ত্রেও গবেষণা চালিয়েছেন গান্ধী।
দেখা গেছে সেসব দেশে আক্রান্ত রয়েছে কিন্তু মৃত্যুর হার কম।
এই মাসে জার্নাল অব জেনারেল ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে মনিকা গান্ধী উল্লেখ করেছেন, মহামারীর প্রথম দিকে বেশিরভাগ লোক মুখোশ পরেনি। প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্তদের মধ্যে ১৫% ছিলো উপসর্গবিহীন।পরবর্তীতে মানুষ যখন মুখোশ পরা শুরু করেছিল, তখন উপসর্গবিহীন মানুষের হার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশে বেড়ে যায়।