করোনাকালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং দিনমজুরদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি- এই দুর্ভোগের সময় কেউ লাভবান হতে চাইলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না-এ রকম হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
সময়োপযোগী এই নির্দেশ খুবই ভাল, বিশেষ করে সেই সব মানুষের জন্যে যারা দিন আনে দিন খায়। বিশেষ করে রিকশাচালক, ভ্যানচালক আর ফুটপাতে সামান্য তরিতরকারি নিয়ে বসে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
দেশের অনেক জায়গায় লকডাউন করা হয়েছে, কোথাও কোথাও অলিখিত লকডাউন চলছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। পুলিশ টহল চলছে। কোথাও সেনাবাহিনীর গাড়ি চলাচল করছে। ভয়ে রিকশাচালকেরা প্রধান সড়কে বের হচ্ছে না। পুলিশ তাদের রিকশা ধরে রাস্তার ওপর উল্টো করে রাখছে, কখনো লাঠির আঘাত করে ছেড়ে দিচ্ছে। পুলিশের আর কিইবা করার আছে? তারা সরকারি হুকুম পালন করে যাচ্ছে।
কিন্তু যদি রিকশাই বের করতে না পারে তা হলে খাবে কি? আর ফুটপাতে তরিতরকারি নিয়ে বসতে না পারলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও কি খাবে?
এই চিন্তা থেকে সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী ৭ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই কনফারেন্সে তিনি যেসব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাদের জন্যে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন যেসব চিকিৎসক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই দুর্যোগের সময়, তাদেরও তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারা এই দরিদ্র মানুষের তালিকা করবে তারা কারা? তারা কতটুকু নিরপেক্ষ হবেন?
ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, সরকারি ত্রাণ চুরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন জনপ্রতিনিধি ‘চালচোর’ হিসেবে ভাইরাল হয়েছে। এখন তো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যাপকভাবে এই ত্রাণ বিতরণ শুরু হবে। আর সেগুলো বিতরণের ক্ষেত্রে যদি দলকানাদের অংশগ্রহণ থাকে তা হলে তো দরিদ্র মানুষেরা সুষম বন্টনে ভাগিদার হতে পারবে না।
কে আওয়ামী লীগের সমর্থক, কে আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠনের সাথে মৌনভাবে সম্পৃক্ত, সেটা বড় হয়ে দেখা দেবে। আর তখনই সমাজের একটা দরিদ্র শ্রেণী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ত্রাণপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। দেখা দেবে বৈষম্য। জন্মাবে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ।
আমরা চাই এই করোনাকালে সরকার ঘোষিত দরিদ্র মানুষের জন্যে বরাদ্দ ত্রাণ দলমত নির্বিশেষে সব নিম্ন আয়ের মানুষ পাক। সেখানে দলকানাদের কঠোর হস্তে দূরে সরিয়ে রাখা হোক। প্রশাসনিকভাবে এই দিকটি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারির বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হোক।
করোনাকালের এই সময়টাতে আমরা সবাই নিজেরা সুরক্ষিত থাকবো, তা হলেই পরিবার, সমাজ থেকে সারা দেশ এক সময় এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে রেহাই পাবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)