করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছে সরকার। এমনটা শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বের প্রায় সব দেশই এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। তবে এমন মহামারীর পরও দেশে যেভাবে করোনাভাইরাস টেস্ট ও চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার খবর সামনে আসছে, তাতে বিষয়টি দিন দিন শঙ্কায় রূপ নিচ্ছে।
চলমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে কয়েকমাস আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সীমিত পরিসরে আকাশপথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে করোনা নেগেটিভ সনদ অপরিহার্য। কিন্তু সেই সনদ থাকার পরও কিছু বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। ইটালিতে এই ঘটনাকে ‘ভাইরাল বোমা নিস্ক্রিয়’ করার সাথে তুলনা করা হয়েছে। বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ইটালির কাছ থেকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের এমন বিশেষণ পাওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর।
ইটালির এই বিশেষণকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের এমন মন্তব্যের কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা ইমেজ সংকটে পড়বে বলেই আমাদের শঙ্কা। করোনা নেগেটিভ সনদ নেওয়ার তিন চারদিনের মধ্যে সংক্রমণ যদিও অস্বাভাবিক নয়, তবুও প্রশ্ন উঠেছে টেস্টের মান নিয়ে। এ বিষয়ে এখনই সতর্কতার সাথে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা উচিৎ।
এর আগেও করোনা মহামারী ইস্যুতে জাপান, সাউথ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে বিমান চলাচলের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এই তালিকায় সর্বশেষ যোগ হলো ইটালি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ ইমেজ সংকট ডেকে আনবে। এতে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে প্রতারণার খবরও দেখা যাচ্ছে। জেকেজি’র পর প্রতারণার তালিকায় ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের নাম এসেছে। অনেক জায়গায় আবার পরীক্ষা না করেই বিদেশযাত্রীরা টাকার বিনিময়ে নেগেটিভ সনদ কিনে নিচ্ছেন। এসব ঘটনা বাংলাদেশের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এজন্য এ বিষয়ে এখনই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনাভাইরাস নির্মূলে প্রধানমন্ত্রী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব প্রতারকদের ঘটনায় তা ম্লান হতে যাচ্ছে। এতে একদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ছে বাংলাদেশ। এছাড়া লাখ লাখ প্রবাসীর ভাগ্য এবং ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা যদি এখনই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করেন, তাহলে বাংলাদেশের সামনে ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে। এজন্য করোনাভাইরাস টেস্টের মান নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।