মাসখানেক আগে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আকস্মিক আক্রমণের পর তার বিস্তার ক্রমেই বাড়ছে। দেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং লাভ-ক্ষতির চুলচেরা বিশ্লেষণে নানান হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা। পিছিয়ে নেই বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোও।
এই করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তার পরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরার প্রস্ততি নিচ্ছেন; তার ঠিক আগের দিন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট ২৫টি প্রস্তাব তুলে ধরলেন।
দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি মূলত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহায়তার জন্য ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানান। পাশাপাশি দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে আপৎকালীন একটি অর্থনৈতিক টাস্ক ফোর্স গঠনেরও আহ্বান তার।
দেশের অর্থনীতির জন্য বিএনপির এসব প্রস্তাব ভালো না মন্দ, কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা বাস্তবসম্মত- তা বিশ্লেষণ, নির্ণয়ের দায়িত্ব সরকারের। তাছাড়া, এসব প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে কি না- সেই সিদ্ধান্তও সরকারের নীতি-নির্ধারকরাই নেবেন। তবে প্রস্তাবগুলো খতিয়ে দেখতেও নিশ্চয়ই সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।
কিন্তু আমরা কি দেখলাম? সরকারের কাছে বিএনপির এসব প্রস্তাব উপস্থাপনের কয়েকঘণ্টার মধ্যে কোনো রকম বিচার-বিশ্লেষণ না করেই খারিজ করে দিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে ‘দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তারা সরকারের বিরুদ্ধাচারের নামে বিপরীত প্রস্তাব তুলে ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন করেছে।’
রাজনীতিতে একটি দলের সঙ্গে আরেকটি দলের প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই। কিন্তু পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাবও থাকতে হয়। জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি আজও এদেশে গড়ে উঠেনি। এমনকি করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার ও বিরোধীদল যখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে; তখন আমার বিপরীতস্রোতে হাঁটছি। ভিন্নমত বা ভিন্ন প্রস্তাবকে এক মুহূর্তেই খারজি করে দিচ্ছি। অথচ এমনটি হওয়া উচিৎ নয়।
আমরা মনে করি, দেশের এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। কারো কোনো প্রস্তাব বিচার-বিশ্লেষণে গ্রহণযোগ্য মনে হলে, তা কাজে লাগানো উচিৎ। এমনকি সেই প্রস্তাব যদি বিরোধীদলেরও হয়। জাতির প্রয়োজনে এই মুহূর্তে দরকার খোলা মন নিয়ে আন্তরিক ঐক্য। তবেই দেশের এই কঠিন, বন্ধুর পথ সহজে অতিক্রম করা সম্ভব।