করোনাকালে সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা ও সারাদেশে যেসব অমানবিক ঘটনার সংবাদ পাই আমরা তাতে বিচলিত বোধ করছি। করোনা সন্দেহে মাকে তার স্বামী সন্তান গভীর জঙ্গলে ফেলে আসে। পরে সেই মায়ের আর্ত চিৎকরে কিছু লোক পুলিশে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি টাঙ্গাইলে। দেখা গেছে তার করোনা পজিটিভ আসেনি।
আরও দুটি ঘটনাও অমানবিক বর্বর মধ্যযুগীয় সংস্কারাচ্ছন্নতা থেকে ঘটেছে। এক. লক্ষণ ও উপসর্গ নিয়ে বাড়ি ফেরায় এক গার্মেন্টস কর্মীকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি তার স্ত্রী সন্তানেরা। তারপর বোনের বাসায় আশ্রয় নিলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। গত ৬ মে’র এই ঘটনা দাউদকান্দির সুন্দলপুর ইউনিয়নের। ঘটনা দুই. নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় এক করোনা রোগীকে বাসা থেকে মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিকসহ এলাকার কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ৬ মে রাত সাড়ে এগারটার দিকে উপজেলার রূপসী বাগবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তকে উদ্ধার করে।
মহামারী পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। এবং সব মহামারীকালে মানুষের ভিতর ধর্মীয় বিভেদ কুসংস্কার অন্ধত্ব মানুষের সভ্যতাকে কলংকিত করেছে। আজকের এই সভ্য যুগের মানুষও যেন সেই মধ্যযুগীয় অন্ধকার থেকে বের হতে পারেনি। আমরা এত উন্নত সভ্যতার দাবি করি অথচ আমাদের আচার আচরণ যেন বর্বরতার ভিতর খাবি খায়। পরিবার, সংসার, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান সবই যেন এই করোনাকালে নতুন রূপে আর্বিভূত হয়েছে। সমাজ সংসার সব মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। মানুষ অমানুষ হয়ে উঠছে।
কিন্তু সভ্য দাবিদার মানুষের হয়ে ওঠার কথা মানবিক। কল্যাণমূলক আচরণে সহমর্মি। অথচ এই আধুনিক যুগে এসে আমরা দেখি মানবতার চূড়ান্ত অপমান। মানুষ কতটা আত্মকেন্দ্রিক চরম স্বার্থপরতায় আক্রান্ত হলে নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-সন্তানকে দূর দূর করে পর করে দিতে পারে। আমরা কেবল পোশাকি চলনে বলনে নিজেদের সভ্য দাবি করতে পারি। এই সমাজে এর চেয়ে ভয়াবহ অমানবিক ঘটনা ঘটেছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে তা ঘটে চলবে। কিন্তু এই করোনাকালের ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষে সবচেয়ে প্রিয়জনদের কাছে থাকার দরকার তখন কিনা আপন মানুষগুলোই তারে অস্পৃশ্য জ্ঞানে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
এসব যদিও বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তবুও তা একদিনে ঘটেনি। হাজার বছরের কুসংস্কার ধর্মান্ধতা অন্ধকারচ্ছন্নতা আমাদের ভিতর এখনও সক্রিয়। আমরা এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। যতই সভ্যতার বড়াই করি।
এসব ক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, মানুষের প্রতি মানুষের বর্বর রূঢ় আচরণ একদিনে বন্ধ হবে না। এজন্য এখনই এগিয়ে আসতে হবে সমাজের বিবেকবান প্রতিটি মানুষকে। সমাজ সংস্কার আজ বড় প্রয়োজন।