বলিউডের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষই এখন চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতি, অনিশ্চিত আগামীর কারণে হতাশা বাড়ছে দিন দিন। করোনা পরিস্থিতিরও কোনো উন্নতি নেই ভারতে। করোনাকালে বলিউডে ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়া টাইমস। তারা কথা বলেছেন নির্মাতা, পরিবেশক ও প্রদর্শকদের সঙ্গে। বিস্তারিত থাকলো এখানে:
নতুন করে সেট নির্মাণ এবং স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করতে গিয়ে খরচ বাড়বে, ক্ষতিও বাড়বে
প্রদর্শক-পরিবেশক অক্ষয় রথী বলেন, ‘মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শুধু প্রদর্শকদেরই ক্ষতি হয়েছে ১৫০০ কোটি রুপি। পুরো বলিউডে ক্ষতির মোট অংকটা আরও বড়। সুদের হার, বেতন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এবং আরও অনেক কিছু হিসেব করতে হবে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। এটা এখন আর্থিক মহামারীতে রূপ নিয়েছে। খুবই ভয়ংকর পরিস্থিতি এবং সরকারের এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত।’
বেশ কিছু সিনেমার শুটিং মার্চের চতুর্থ সপ্তাহে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। শুরু কবে হবে, তাও কারও জানা নেই। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘গাঙ্গুবাই’ এবং বনি কাপুরের ‘ময়দান’ এর সেট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ভাড়া দিয়ে সেই সেট ধরে রাখার সামর্থ্য হয়নি প্রযোজক, নির্মাতাদের। শুটিং শুরু করতে হলে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে হবে সেসব সেট। সাথে যোগ করতে হবে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে শুটিং-এর সময়ও বেশি লাগবে। সব মিলিয়ে খরচ বেড়ে যাবে বহুগুণে, বললেন অক্ষয় রথী।
রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের সিইও, শিবাশিশ সরকার অধীর আগ্রহ নিয়ে ‘এইটি থ্রি’ ও ‘সূর্যবংশী’ মুক্তির দেয়ার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছি কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে সহায়তা করার জন্য। আশা করছি কিছুটা পাবো। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। থিয়েটারগুলো খুলে দেয়া উচিত, এতে ব্যবসা কিছুটা হলেও ফিরবে। পুরো বিশ্বেই দর্শকরা থিয়েটারে ফিরছে। আশা করি ভারতেও ফিরবে। ভারতে কম পর্দা আছে তুলনামূলক ভাবে, তাই আগের অবস্থায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে। থিয়েটার খুলে দেয়া উচিত, অন্তত কিছু হলেও। শপিং মল খুলেছে, কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সগুলো খুললো না। ভাইরাস কি শুধু সিনেমা হলেই থাকে? শপিং মলে থাকে না?’
তারকাদের পারিশ্রমিক কমাতে হবে
ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ বলেন, “ক্ষতির পরিমাণটা অনেক বড় হয়ে গেছে। এপ্রিল থেকে জুন হলো বলিউডের পিক টাইম। এটাই জলে ভেসে গেল। সামনের পথে কী অপেক্ষা করছে, তাও পরিষ্কার নয়। প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায় তারা কতটা দুশ্চিন্তায় আছেন। মুক্তির অপেক্ষায় অনেকগুলো সিনেমা জমে গেছে। ‘সূর্যবংশী’র নির্মাতারা মহারাষ্ট্রের সরকারের কাছে অল্প অল্প দর্শক নিয়ে সারাদিন সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি চেয়েছেন। প্রতিযোগিতায় থাকা অনেক ছবি থেমে গেছে। অনেক সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ থেমে গেছে। শুটিং হচ্ছে কই, হাতে গোনা দুয়েকটা ছবির বিদেশে শুটিং ছাড়া? এই কাজে জড়িত দিনমজুরদের কথা ভাবুন।”
তরণ আদর্শ আরও বলেন, ‘তারকাদের উচিত তাদের পারিশ্রমিক কমানো।প্রযোজকরা যদি নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে তারা কীভাবে ছবি মুক্তি দেবেন?’
ক্ষতির পরিমাণ যা ধারণা করা হচ্ছে তার দ্বিগুণ
ট্রেড অ্যানালিস্ট কমল নাহাতা মনে করছেন, বলিউডে ক্ষতির আসল পরিমাণটা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ৫০% কমিয়ে বলা হচ্ছে। এখনও আরও অনেক ক্ষতি হওয়া বাকি। থিয়েটার এখন না খোলা হলে তারা হলে প্রদর্শন করবেন কী? মুক্তির অপেক্ষায় থাকা অনেক সিনেমাই তো ওটিটি প্লাটফর্মের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে।’
পরিবেশক রমেশ সিপ্পি মনে করছেন ক্ষতির পরিমাণটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ আরও দীর্ঘদিন এই প্রভাব থাকবে। কত ক্ষতি হয়েছে বলিউডে তা বলা যাবে দুই থেকে তিন বছর পর।
বাধ্য হয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়া
প্রযোজক-নির্মাতা সুজয় ঘোষ বলেন, ‘ক্ষতির অংকটা অনেক বড়, চমকে যাওয়ার মতো। কিন্তু কী করার আছে? পুরো বিশ্বই ভুগছে। আমরা আগের অবস্থায় ফেরার আশায় দিন গুনছি।’
প্রযোজক রমেশ তাউরানি বলেন, ‘যেসব নির্মাতাদের সিনেমা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাচ্ছে, তারা অবশ্যই খুশি নন। আমরা আমাদের সিনেমাগুলো হলে মুক্ত দিতে চাই। কিন্তু বাধ্য হয়েই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দিতে হচ্ছে।।’
করোনাকালে বলিউডে এখন পর্যন্ত কত ক্ষতি হয়েছে তা অনুমান করেছেন প্রযোজক, পরিবেশন, প্রদর্শকরা। এক নজরে দেখে নিন তারা কে কী বলছেন ক্ষতি সম্পর্কে।
অক্ষয় রথীর মতে: ৪৫০০-৫০০০ কোটি
শিবাশিস সরকার মতে: ৪৫০০ কোটি
রমেশ সিপ্পির মতে: ক্ষতি বাড়ছেই
ত্বরণ আদর্শর মতে: ৪০০০ কোটি
কমল নেহাতার মতে: ৯০০০ কোটি