ব্যক্তির আয়ের ওপর বিদ্যমান করের সীমা নতুন অর্থবছরের বাজেটেও বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবে তার এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই একই হার রয়েছে। তাই আবারো করমুক্ত আয়সীমা বাড়াতে দাবি জানাবেন তারা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে মহিলা করদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির করদাতাদের জন্য এ সীমা কিছুটা কম।
অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে খুশি নন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, যে হারে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, সে হারে করমুক্ত আয়ের সীমা তুলনামূলক কম। এই সীমা আরো বাড়ানো উচিত ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি কিন্তু তা করা হয়নি।
করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো য়ৌক্তিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন জীবন যাত্রার ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। সেই হিসেবে এই সীমা বাড়ানো দরকার ছিল।
শফিউল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময় এই দাবি জানিয়ে আসছি। এখন আবারও সরকারকে বলবো করমুক্ত আয়সীমা যেন ৩ লাখ টাকা করা হয়।
করমুক্ত আয়ের সীমা পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবারো সরকারের কাছে দাবি জানাবে ঢাকা চেম্বার।
সংগঠনটির সভাপতি সভাপতি আবুল কাসেম খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু করা হয়নি। তাই আবারো সরকারের কাছে দাবি জানাবো ব্যক্তি আয়ের করমুক্ত সীমা যেন বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়।
জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা কি হবে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, উন্নত দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা সাধারণভাবে মাথাপিছু আয়ের ২৫ শতাংশের নীচে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করমুক্ত আয়সীমা সাধারণত মাথাপিছু আয়ের সমান বা তার কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা মাথাপিছু আয়ের প্রায় দ্বিগুণের মতো।’
‘অর্থাৎ, আমাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের তুলনায় অনেক বেশি। করমুক্ত আয়ের সীমা বেশি হলে কর প্রদানে সক্ষম বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি করজালের বাইরে থেকে যান। এতে করের ভিত্তি দুর্বল থাকে। সার্বিক বিবেচনায় আগামি বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ও করহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি।’
তবে কোন ব্যক্তি-করদাতার প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য থাকলে এরূপ প্রতি সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা হবে।
গত তিন বছর থেকে ব্যক্তি শ্রেণির করসীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির আয় করমুক্ত।
এনবিআরকে দেয়া বাজেট প্রস্তাবনায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (ডিসিসিআই) ব্যবসায়ি সংগঠনগুলো বাজেটে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার অনুরোধ করেছিল।
এছাড়া বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডিসহ অন্যান্য সংস্থাও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এই ব্যক্তি শ্রেণির করহার ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ কর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়। এর ফলে ব্যক্তি করদাতারা তাদের সত্যিকার আয়কর প্রকাশে উৎসাহিত হবে এবং কর ফাঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে মনে করছে গবেসণা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।
চলতি বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির আয় আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে, আড়াই লাখ টাকা থেকে পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এবং তার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে।