সারা দেশে পালিত হলো নিরাপদ সড়ক দিবস। এর আগের রাতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পিকআপের ধাক্কায় রিকশায় থাকা মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে নাবিলা নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার রাত ১০টার দিকে রিকশা করে এক বছর বয়সী শিশু নাবিলাকে সঙ্গে নিয়ে নিউমার্কেট থেকে আদাবরের বাসায় ফিরছিলেন মা নাজমা বেগম। মোহাম্মাদপুর থানার সামনের সড়কের ক্রসিংয়ে একটি পিকআপের ধাক্কায় রিকশা থেকে সন্তানসহ পড়ে যান তিনি। ওই সময় শিশু নাবিলার ওপর দিয়ে রিকশার চাকা উঠে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় নাবিলাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (এআরআই) হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে শুধু রাজধানীতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২৪টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২১৫ জন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ওই আন্দোলনের আড়াই মাস পর সড়কের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ করতে সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে শুধু বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে হবে না, জবাবদিহির জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পথচারীদের সচেতনতার উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনা না কমার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি দুর্ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করেন। জনগণ যাতে আরো সচেতন হয় এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলে সে বিষয়ে গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে মনে করিয়ে দেন যে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পরিবহন আইন সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সড়ক দুর্ঘটনা না কমার পেছনে জনগণের অচেতনতা দায়ী। পথচারীরা সচেতন হলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে তার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলতে চাই, কেবল আইন সংশোধন করলেই হবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি চালু রাখতে হবে। সড়কে পরিবহনের মালিক, চালক, শ্রমিক এবং যাত্রী সব পক্ষ যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোন পক্ষ আইন অমান্য করলে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা নিরাপদ সড়ক পাব। পরস্পরকে দোষারোপ করে কখনো দুর্ঘটনা কমবে না, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।