‘কবিতাকে শুধুমাত্র শুদ্ধ উচ্চারণ আর ভরাট গলা এই দুয়ের সংমিশ্রণ বললেই হবে না। বরং কবিতাকে নিতে হবে চর্চা হিসেবে। তাহলেই অনেকটা সময় পেরিয়ে আপনি পারবেন নিজেকে সত্যিকারের কবিতাপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে।’
শিল্পচর্চা করতে গেলে অবশ্যই কতগুলো মৌলিক বিষয় থাকা উচিত। যেমন: ধৈর্য থাকতে হবে, প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হবে এবং বিষয়টার সাথে লেগে থাকতে হবে। কবিতা কেবল কণ্ঠের শিল্প না, বরং মস্তিষ্কের শিল্প।’
কবিতার সঙ্গে নিজের বা মানুষের সম্পর্ককে এভাবেই ব্যাখ্যা করছিলেন আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা।
সম্প্রতি কবিতা নিয়েই শিমুল মুস্তাফার সাথে এক আলোচনায় বসেছিলো চ্যানেল আই অনলাইন। কথায় কথায় উঠে আসলো কবিতা নিয়ে এদেশের মানুষদের অনাগ্রহ এবং তার মনোভাবের কথাও।
বললেন, আজকাল অনেকেই পাইরেসির দিকে ঝুঁকেছে। এরফলে একটা অ্যালবাম বাজারে আসার আগেই সেটা অনলাইন বা ইউটিউবে সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। তাহলে অ্যালবামের আর মানে কি থাকলো?
তাই অ্যালবাম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আপাতত নেই এই আবৃত্তিকারের। আর আজকাল ছেলেমেয়েরা সাহিত্য বা আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় না। পড়তে চায় বিবিএ, এমবিএ। অর্থনৈতিক দিক থেকেই পরিমাপ করে নিজেদের প্রাপ্তি। এভাবে চললে কবিতার স্থান হবে কোথায়? নতুন প্রজন্মই বা কি করে পরিচিত হবে কবিতার সঙ্গে।
শিমুল মুস্তাফা বললেন, আবৃত্তি আমাদের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। তাই সেটাকে চর্চা করে আমাদেরই টিকিয়ে রাখতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়লে সেটাকে আমরা ধনী দেশ বলবো বটে কিন্তু সংস্কৃতিক প্রবৃদ্ধি না হলে কি দেশটা সুষ্ঠু দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে? সংস্কৃতি ছাড়া ধনী কোনো দেশ কিন্তু সৌদি আরবও হয়ে উঠতে পারে। আমরা নিশ্চয়ই সেটা চাই না।
তাহলে এর সমাধান কি? নাকি এভাবেই বিলীন হয়ে যাবে এই সংস্কৃতিও?
সচেতনরা সিদ্ধান্ত নিলেই এসব সমস্যার সমাধান আনা সম্ভব বলে মনে করেন এই কবিতাপ্রেমী। বলেন, এসব সমস্যা থেকে নতুন প্রজন্মকে উঠিয়ে আনতে হলে সচেতন হতে হবে নীতি নির্ধারকদেরই। আমাদের ইতিহাস খুব নির্মম। বারবার লোভের দিকে এগোলে একসময় সেই লোভটাকেই প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে যায়। কবিতার মতো একটি বিষয়কে ত্রিমাত্রিক করে তোলার কাজটা কিন্তু সহজ নয়। কবিতার সাথে কোনো অনুষঙ্গ ব্যবহার করার সুযোগ নেই। না অঙ্গভঙ্গি, আর না কোনো বাদ্যযন্ত্র।
ইতিহাস নির্ভর কোনো কবিতা আবৃত্তি করলেই সেটা যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠে, এমন আবৃত্তি রপ্ত করতে না পারলে আবৃত্তিকারের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি।