একই মাঠ, একই পিচ। শুধু প্রতিপক্ষ ভিন্ন। সাউদাম্পটনের দ্য রোজ বোলের যেখানে ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচ হয়েছিল, সেই পিচেই বাংলাদেশ-আফগানিস্তান লড়াই। তবে যে পিচে প্রথম ব্যাট করে ভারত করেছিল ২২৪ রান, সেখানে আগে ব্যাট করে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশ করেছে ২৬২ রান। আগের ম্যাচের বিচারে আফগানদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জই রাখল টাইগাররা।
২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ২৬০’র ঘরেই (২৬৭) স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও টপস্কোরার ছিলেন মুশফিক। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ১০৫ রানে।
ম্যাচের ভেন্যু আর পিচের মতো মিল আছে আরও। ভারতের বিপক্ষে রোহিত শর্মাকে আউট করে প্রথম উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনার মুজিব-উর রহমান। এদিনও চিত্রটা একই। কাকতালীয়ভাবে ভারত ইনিংসের মতো বাংলাদেশের ইনিংসেও ছক্কার থাকল একটি। ভারতের ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি দুটি, বাংলাদেশেরও তাই।
টস জিতে মাশরাফীকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব। একাদশে পরিবর্তনের মতো ওপেনিংয়েও পরিবর্তন এনে লিটন দাস আর তামিম ইকবাল নামেন বাংলাদেশের হয়ে। কিন্তু পঞ্চম ওভারের মধ্যেই লিটনকে ঘরে ফিরতে হয়। ১৭ বলে ১৬ রান করে মুজিবের বলে ক্যাচ আউট হয়ে যান।
স্পিনার মুজিব-উর রহমানের বলে হাসমতউল্লাহ শাহিদিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। যদিও সেই ক্যাচ নিয়ে প্রশ্ন আছে।
মুজিবের বলে কভারে ড্রাইভ খেলেছিলেন লিটন। শর্টকভারে দূরহ এক ক্যাচ নেন হাসমতউল্লাহ। ক্যাচ নিয়ে তিনি উদযাপন শুরু করলেও নিশ্চিত ছিলেন না দুই ইংলিশ আম্পায়ার মাইকেল গফ ও রিচার্ড কেটেলবরা। অনফিল্ড আম্পায়ারদ্বয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য রিভিউ চেয়ে বসেন। টিভিতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রিভিউতে ফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক।
দলীয় ২৩ রানের মাথায় ধাঁধার ক্যাচে লিটন (১৬) ফেরার পর তামিম ইকবালের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান। ৫৩ বলে ৩৬ রান করে ফিরেছেন তামিম। মোহাম্মদ নবির বলে বোল্ড হন বাংলাদেশ ওপেনার। রান পেলেও পুরো বিশ্বকাপের মতো এই ম্যাচের শরীরের ভাষায় আস্থার অভাব দেখা গেছে।
আসরের শুরু থেকে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা সাকিব আল হাসান এদিনও ছিলেন চেনারূপে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি বিশ্বরেকর্ড করে ফেলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বিশ্বমঞ্চে ১০০০ রান পূর্ণ করেছেন।
এর আগে ১৮ জন ব্যাটসম্যান এই রেকর্ড করেছেন। টুর্নামেন্টে পঞ্চমবারের মতো ৫০’র বেশি রানের ইনিংসও খেলে ফেলেন সাকিব। যার মাধ্যমে আবারও আসরের সর্বোচ্চ রান স্কোরার তালিকায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকে ছাড়িয়ে যান।
শুরু থেকে বেশ ভালো সিঙ্গেলের উপর খেললেও ফিফটি তোলার পর অনেকটা আটকে যান সাকিব। একই অবস্থা হয় মুশফিকেরও। এই অবস্থায় বোলিংয়ে পরিবর্তন এনে মুজিবের হাতে বল তুলে দেন আফগান অধিনায়ক। আস্থার প্রতিদান দিতে একটুও সময় নেননি তিনি। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে সাকিবকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মুজিব।
একবার রিভিউতে বেঁচে গেলেও এবার আর রিভিউ নেননি সাকিব। অপরপ্রান্তে থাকা মুশফিক রিভিউর কথা বললেও মাথা নেড়ে মানা করেন। ৬৯ বলে ৫১ রান করা সাকিবের ইনিংসে মাত্র একটি চারের মার।
সাত ম্যাচের ছয় ইনিংসে সাকিবের রান এখন ৪৭৬। দ্বিতীয়স্থানে থাকা ওয়ার্নারের রান সাত ছয় ইনিংসে ৪৪৭।
ওপেনিং থেকে পাঁচ নম্বরে নেমেও ফর্মের বদল আনতে পারেননি সৌম্য সরকার। তার আউটটা নিয়ে যদিও বিতর্ক হতে পারে। মুজিবের অফস্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল লেগস্টাম্প দিয়ে প্রায় বেরই হয়ে যাচ্ছিল। কোনো রকমে স্পর্শ লাগে স্টাম্পে। রিভিউ নিয়ে রক্ষা পাননি সৌম্য (৩)। রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি ব্যাটের খুব কাছেই গিয়েছিল। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছিল বল ব্যাটেই লেগেছে। কিন্তু আম্পায়ার আলট্রা এজ দেখেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন।
ভারতের বিপক্ষে ১০ ওভারে ২৬ রানে এক উইকেট নেয়া মুজিব এদিন নেন ৪১ রানে তিন উইকেট। তার বোলিংয়ে এত বৈচিত্র ছিল যে, ধারাভাষ্য দিতে দিতেই টুইট করেন হার্সা ভোগলে। বলেন, মুজিব-উর রহমানের বোলিংটা দেখতে ভালোই লাগছে। কী ভেরিয়েশন!
টাইট বোলিংয়ে বাংলাদেশ চেপে ধরে আফগানিস্তান। একসময টানা ১২ ওভারের বেশি কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে ৭৩ বল পর ছক্কায় সেই গেরো কাটান মুশফিক। ওই ছক্কা দিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আর ক্যারিয়ারের ৩৫তম হাফসেঞ্চুরির পূর্ণ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। শেষ পর্যন্ত এই হাফসেঞ্চুরিকে তিন অঙ্কে রূপ দিতে পারেননি। ৮৭ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৮৩ রানে দৌলত জাদরানের শিকার হন মুশি।
ক্রিজে নামার পর থেকেই স্বাচ্ছন্দ্য মনে হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। রান নেয়ার সময় খোঁড়াতে দেখা যায় তাকে। মাঠের ভেতর চিকিৎসাও নিতে হয়। তবু মনের জোর নিয়ে মুশফিকের সঙ্গে লড়ে যান তিনি। গুরুত্বপূর্ণ ৫৬ রানের জুটি গড়ে নিজে আউট হন ২৭ রানে। তার ৩৯ বলের ইনিংসে ছিল দুটি বাউন্ডারি।
এক ম্যাচ বাদে একাদশে ফিরে মন্দ করেননি মোসাদ্দেক। মুশফিককে সঙ্গ দেয়ার সঙ্গে নিজেও চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন। ২৪ বল খেলে চারটি চারের ৩৫ রান করে গুলবাদিনের বলে বোল্ড হন। আর দলের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৬২ রান।
আফগানদের হয়ে মুজিব-উর রহমানের তিন উইকেটে সঙ্গে গুলবাদিন দুটি উইকেট নেন। এছাড়া একটি উইকেট নেন জাদরান ও নবি।