লেগস্টাম্পে ডেলিভারি। ওয়াইড অব দ্য ক্রিজ। চকিতে গ্রিপ-টার্ন। বিভ্রান্ত বেন ডাকেট। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে অফস্টাম্পে বলের আলতো ছোঁয়া। সাদা পোশাকে মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম উইকেট। এভাবে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ড সিরিজ শেষে কচি পায়ে অচেনা এক বালকের ‘হিমালয়’ ছোঁয়ার গল্প। সেই মিরাজ এখন পরিচিত। আলোচিত। তার শক্তি, তার দুর্বলতা নিশ্চয়ই খুটেখুটে দেখছেন স্মিথরা। রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া সিরিজে মিরাজের চ্যালেঞ্জটা তাই কঠিন।
ইতিহাসের ষষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম দুই টেস্টে তিনবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে আলোচনায় আসার পর শ্রীলঙ্কা সফরেও টেস্টে ভালো করেন মিরাজ। তাই সামনে যখন আরেকটি টেস্ট সিরিজ, তখন তিনি আলোচনায় আসবেন, সেটাই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়া যাদের নিয়ে এবার বাংলাদেশে এসেছে, তাদের মধ্যে ছয়জন বাঁহাতি ক্রিকেটার। যারা সবাই ব্যাটিংয়ে দক্ষ। মিরাজের সুবিধাটা হলো বাঁহাতিদের বিপক্ষেই তিনি ভালো বল করেন। এমনিতে অফস্পিনাররা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বেশি ভোগান। মিরাজ যেন আরও একটু বেশি।
ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় আনার ম্যাচে ১২ উইকেট পান। তার মধ্যে আটজনই ছিলেন বাঁহাতি! চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টেও বাঁহাতিরা তাকে মোকাবিলা করতে খাবি খেয়েছিলেন।
সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের শততম টেস্টেও বাঁহাতিদের বিপক্ষে মিরাজ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। দুই ইনিংসে চারটি উইকেট পান। তার মধ্যে দুইবার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের উইকেট। ডানহাতি ব্যাটসম্যানরা যেখানে তার বিপক্ষে ৪৫ শতাংশ রান নেয়, সেখানে বাঁহাতিরা ৩০ শতাংশ।
মিরাজের চিন্তার জায়গাও কম নয়। এখনও সোজা ডেলিভারিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি। চট্টগ্রামে জনি বেয়ারস্টোকে অড ডেলিভারিতে আউট করেছিলেন। পরে নিজেই জানান, ওই বলটা ইচ্ছাকৃত নয়, হয়ে গেছে! অস্ট্রেলিয়ানদের বিপক্ষে ভালো করতে হলে এইসব বৈচিত্র্যময় ডেলিভারিতে তার দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। মিরাজেরও নিশ্চয়ই সেটা অজানা নয়।
মিরাজের আগমনবার্তা ছড়ায় বয়সভিক্তিক ক্রিকেট থেকে। বিশেষ করে যুব বিশ্বকাপে প্রায় একাই দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে আসেন। সেমিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারলেও মিরাজ ছিলেন মিরাজের মতো। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ২২৬ রান করে। জবাবে ৫ ওভারের ভেতরই ৪০ পার করেন লারার দেশের ছেলেরা। গিডরন পোপ ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশি বোলারদের বিপাকে ফেলেন।
গেইলকে মনে করিয়ে দেয়া পোপ সেদিন মিরাজকে আড়াল করতে পারেননি। বাংলাদেশি অধিনায়ক তখন ৩.৫ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। পোপকে স্ট্রাইক প্রান্তে দেখেই সপ্তম ওভারে নিজে আক্রমণে আসেন। পঞ্চম বলে ডিপ মিড-উইকেটের আকাশ দিয়ে পোপ ছয় হাঁকান। ঠিক পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে যেয়ে চোখজুড়ানো কুইকারে বোকা বনে যান। দিনশেষে মিরাজ জয়ের মেহেদি মাখতে ব্যর্থ হন ঠিকই; কিন্তু পোপের সঙ্গে ওই মানসিক যুদ্ধ জিতে লিখে রেখে যান এক বালক-বীরের আগমনী উপাখ্যান।