চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কক্সবাজারের রাস্তায় কেন প্রায়ই পড়ে থাকে ঘোড়া?

বৃহস্পতিবার সকাল। কক্সবাজার শহরে পথচারীদের চোখ আটকে গেছে রাস্তায় পড়ে থাকা জীর্ণ-শীর্ণ বাদামী রঙের একটি ঘোড়ায়। দেখে মনে হচ্ছে মৃত, কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় তখনও প্রাণ রয়েছে। 

ব্যস্ত রাস্তার উপর পড়ে ছিল সেটি। উঠে দাঁড়াতে পারছিল না ঘোড়াটি। পরবর্তীতে কারা সেখান থেকে ঘোড়াটিকে সরিয়ে ফেলেন বলতে পারছেন না স্থানীয়রা।

জানা গেছে, দুই চোখ অন্ধ ও পা খোঁড়া ওই ঘোড়ার মালিক মোহাম্মদ আব্বুল্লাহ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে।

শুধু আজকেই নয়, কক্সবাজার শহরে চলতে গেলে পথচারীরা প্রায়ই এমন দৃশ্যের সম্মুখীন হন। এ ঘটনার সাথে পরিচিত তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এ ঘোড়াগুলো সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। যতদিন পর্যন্ত এগুলো কর্মক্ষম থাকে ততদিন পর্যন্ত মালিকরা সেগুলো দিয়ে অর্থ আয় করেন। কিন্তু বয়স হয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে ঘোড়াগুলো তত্ত্বাবধান করেন মালিকেরা। রোগ হলে চিকিৎসা করান। তারপর মুত্যু হলে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় তাদের।

তবে ঘোড়াগুলোর বয়স হলে মাঝে মাঝে তাদেরকে কিছু সময়ের জন্য রাস্তায় ছেড়ে রাখতে হয় বলে জানিয়েছেন মালিকরা। অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের এভাবে ঘোড়া ছেড়ে না রাখতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও শুনছে না কেউ।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান জানান: ঘোড়াগুলো যখন অক্ষম হয়ে যায় তখন ঘোড়ার ব্যবসায়ীরা সেগুলো মাঝে মাঝে রাস্তায় ছেড়ে দেন।

কক্সবাজার শহরে এমন ঘোড়া প্রায়ই দেখা যায় উল্লেখ করে পৌর মেয়র বলেন: ঈদের পর এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে মিটিং করেছি এবং কক্সবাজারের মহল্লায় মহল্লায় মাইকিং করেছি, এমনকি লিফলেট বিতরণ করেছি, যাতে এ ধরণের কাজ করা থেকে ঘোড়ার ব্যবসায়ীরা বিরত থাকেন। এবং ঘোড়ার ব্যবসায়ীরা ঘোড়াগুলো এভাবে না ফেলে রাখেন।

তিনি বলেন: আমরা ১ মাস সময় নিয়েছি। এরপরও যদি এভাবে রাস্তায় ঘোড়া দেখা যায়, মালিকরা যদি ঘোড়া ছেড়ে রাখে তাহলে আমরা ঘোড়াগুলো উদ্ধার করে কক্সবাজার ডুলাহাজরা পার্কে দিয়ে দেবো।

তবে বয়স্ক ঘোড়াকে উৎফুল্ল রাখতেই মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার শহরে ঘোড়া কেনাবেচার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী নিশান আহম্মেদ।

নিশান বলেন: মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া হয় ঘোড়াগুলো। নির্দিষ্ট সময় পর আবার নিয়ে আসা হয় তাদের। বয়স্ক ঘোড়াগুলোকে সবসময় চোখে চোখেই রাখা হয়। তাদের যত্নে কোনো গাফিলতি নেই।

তিনি জানান: টাঙ্গাইলের সখিপুর ও তুলিরহাট থেকে কিনে আনা হয় ঘোড়াগুলো। প্রতিটি ঘোড়া বাবদ খরচ হয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ঘোড়াগুলো কিনে এনে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন তিনি। নিশানের বাবা-ভাই প্রায় সবাই এ ব্যবসার সাথে জড়িত।

ঘোড়াগুলোর নিয়মিত তত্ত্বাবধানের জন্য সার্বক্ষণিক পশু হাসপাতাল ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তা নেন বলে জানিয়েছেন এই তরুণ ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, প্রতিটি ঘোড়া প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর পরিশ্রম করতে সক্ষম থাকে। ঘোড়াগুলোর পেছনে দিন প্রতি খাবার বাবদ খরচ হয় প্রায় ৬০০ টাকা। এছাড়া ঘোড়াগুলো রোগে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় ৪০০ থেকে শুরু করে প্রায় ২০০০ টাকা পর্যন্ত।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঘোড়ার ব্যবসায়ী ফরিদা চ্যানেল আই অনলাইন-কে জানান: তাদের পরিবারের সবার কাছে প্রায় ১২টি ঘোড়া রয়েছে। তার মধ্যে ফরিদার ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে ২টি ঘোড়া। এ ঘোড়াগুলো থেকে তাদের যা আয় হয় তা দিয়ে প্রতিদিন ঘোড়ার খাবার কিনে বাকি টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার।

ঘোড়াগুলো মারা যাবার পর কী করা হয় সে প্রশ্নের উত্তরে ফরিদা বলেন: মৃত্যুর পর ঘোড়াগুলো মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়।

ছবি: কাওসার শাকিল