১৯৫২ সালের এই বসন্তে রক্তঝরা ভাষা আন্দোলন ছিল পাকিস্তানি অপশাসনের ললাটে বাঙালি জাতির প্রথম পদাঘাত। বাঙালিকে অস্বীকার করে শোষণ এবং বৈষম্যের যে নীতি পাকিস্তান নামের কথিত রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, স্বাধীনচেতা বাঙালি কখনোই তা গ্রহণ করেনি। সেই উপেক্ষা আর বঞ্চনার ক্ষোভকে প্রথমবারের মতো দ্রোহে রূপান্তর করে ভাষা আন্দোলন। রাষ্ট্র ভাষার প্রধান দাবিদার বাংলাকে বাদ দেয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আন্দোলন। ৫২’র রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির জয়যাত্রার সূচনা। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে শোষণ আর বঞ্চনার অবসান হয়। তবে স্বাধীনতার প্রায় পাঁচ দশকের পথচলায় পাকিস্তানি অপশক্তি বারবার হানা দিতে চেয়েছে এই লাল-সবুজের মানচিত্রে। সেটা কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। অনেক চড়াই-উৎরাই আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র অনেকটাই ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় গত দেড় যুগ ধরে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এমনকি বাঙালির বুকে বুলেট চালানো সেই পাকিস্তানও আজ মাথা নত করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে বাধ্য। ‘ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য নয়’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে ইউনেস্কো। শুধু ভাষার ভিত্তিতে নয়, সকল ধরনের বৈষম্যহীন বিশ্ব চাই আমরা। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার দ্বারপ্রান্তে। আরেক বসন্তে আমাদের আরো এগিয়ে যাবার পালা। সেই পথচলায় একুশের যে মূল চেতনা ‘মাথা নত না করা’, সেই চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে সবার উপরে তুলে ধরতে হবে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায় আমরা বলতে চাই- ‘ও মা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি, আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি…’। মহান একুশেতে ভাষা শহীদসহ সকল ভাষা সংগ্রামীর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।