আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি ওয়েজ বোর্ড নিয়ে সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র নিয়ে খুবই অসম্মানজনক কথা বলেছেন। যা দেশবাসী দেখেছেন এবং শুনেছেন। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সাধারন মানুষের কাছে তিনি সংবাদপত্র শিল্পকে এবং এর সাথে জড়িতদের হেয় করেছেন। যা তাঁর মত মানুষের কাছে প্রত্যাশিত নয়। এ রকম কথা শিশু অথবা মানসিক ভারসাম্যহীনদের কাছ থেকেই আসতে পারে।
সবচেয়ে মজার বিষয়, তিনি ওয়েজ বোর্ড নিয়ে অবোধ শিশুর মত বলেছেন সংবাদপত্রের মত টেলিভিশনেও নাকি ওয়েজ বোর্ড দেওয়া হয়। দেশবাসী নিশ্চয়ই দেখেছেন অর্থমন্ত্রী যখন কথাগুলো একনাগারে বলে যাচ্ছিলেন তখন পেছনে আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেব হাসছিলেন। কি বিচিত্র আমাদের দেশ! একজন অবোধ শিশুর মত আচরণ করছেন আর তা বুঝতে পেরে অন্যজন হাসছেন। অবশ্য আমরা ধরে নিয়েছি মাননীয় তথ্যমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর কথা শুনেই হাসছিলেন।
ওয়েজ বোর্ড নিয়ে তিনি যা বুঝেছেন তাতে কিছুটা সত্যতা আছে। তা হল দুচারটা পত্রিকা ছাড়া কেউই ওয়েজ বোর্ড দেয় না সংবাদকর্মীদের। নিরবেই সহ্য করে যান বাকি সাংবাদিকেরা। আরেকটা বিষয়, ওইদিন নোয়াব সংগঠনের সদস্যদের সাথে বৈঠক করে যা বুঝেছেন তাই বলেছেন। পত্রিকায় যারা আসলে ওয়েজ বোর্ড দিয়ে থাকেন তাদের দু’একজন ছিলেন ওই ‘নোয়াবি’ সভায়। তাদের যন্ত্রণা হল, যদি নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হয়, তা হলে তাদের দিতে হবে। আর তারা দিয়েও থাকেন। কারণ তারা সবচাইতে বিজ্ঞাপন বেশি পান। তাদের আয় রোজগার ভাল। সুতরাং তারা তো দিবেনই। এটা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু তাঁরা নিশ্চয়ই এমন কিছু বুঝিয়েছেন অর্থমন্ত্রীকে যে জন্য মন্ত্রী মহোদয় মাথা গরম করে ওইসব শিশুসুলভ আচরণ করেছেন। যা নিন্দনীয় একদিকে, অন্যদিকে গ্রহণযোগ্যও নয়। এ জন্য অবশ্যই তাঁকে ভুল স্বীকার করতেই হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই ভুল স্বীকার নিয়ে আমাদের সাংবাদিকরা কেন এক হয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারছি না। কেন আলাদা আলাদা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একবার ওই সাংবাদিক সংগঠনের একাংশ, আরেকবার ওই সাংবাদিক সংগঠনের একাংশ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এখানেও সেই দলীয় গন্ধ থেকে বের হতে পারছি না।
‘রাবিশ’ আর ‘বোগাস’ বলে বলে একজন মন্ত্রী পার পেয়ে যাচ্ছেন, আর সাংবাদিকরা কেন তার সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকছেন না? তিনি যেভাবে ওইদিন সংবাদপত্রকে নিয়ে অসম্মানজনক কথা বলেছেন তাতে কি কোনো সাংবাদিকের আঁতে ঘা লাগেনি? নাকি অন্য কোনো ভয় বা সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় তাঁর সংবাদ প্রচার করেই যাচ্ছি? বোধগম্য না বিষয়টি।
যেখানে আমাদের রেল ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওইদিনের পরই বলেছেন ওয়েজ বোর্ড নিয়ে কাজ এগিয়েছে ৮০ ভাগ। প্রধানমন্ত্রীরও আপত্তি নেই। সেখানে অর্থমন্ত্রী না বুঝে, নোয়াব এর কথা শুনে গড়গড় বলে গেলেন রাবিশ আর বোগাস মার্কা কথা।
আরেকটি বিষয়, যখনই সরকারের কোনো মন্ত্রী কোনো অসংলগ্ন কথা বলে ফেলেন তার একদিন বা দুদিন পরেই সরকার দলের কোনো কোনো নেতা বলেন, এটা তার একান্ত নিজের মত। এর সাথে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
মানে কি? যিনি ওই কথাটা বলছেন তা হলে তিনি কোন দলীয় সরকারের প্রতিনিধি?
আমাদের সংবাদকর্মী এবং সাংবাদিক নেতাদের কাছে বিণীত অনুরোধ. দলপ্রীতির উর্ধ্বে উঠে নিজেদের আত্মসম্মান ক্ষুন্ন যারা বা যিনি করবেন তা বিরুদ্ধে একসাথে সোচ্চার হতে হবে। তা না হলে দেশের মানুষ মনে করবে এরা নাখা ভুখা দুই টাকার সাংবাদিক, এদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী যেভাবে কথা বলেছেন সেটা বোধহয় ঠিকই আছে। আমাদের সম্মান আমাদেরই রাখতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)