ওয়েজবোর্ড প্রণয়নের সময় মালিকপক্ষের লোকেরা সবসময়ই কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ‘প্রতিনিধি সম্মেলন-২০১৮’-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে আসার পর ইতোমধ্যে অষ্টম ওয়েজবোর্ড করে দিয়েছি। নবম ওয়েজবোর্ড করার প্রক্রিয়াও চলছে। কাজেই আশা করি সেটাও করা হবে।’
‘তবে আপনারা জানেন, ওয়েজবোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা থাকেন। তারা সবসময়ই একটু কালক্ষেপণ করার চেষ্টা করেন। এটা আপনারা নিজেরাও ভালো করে বোঝেন। আমার এখানে কোনো ব্যাখ্যা দিতে হবে না।’
নবম ওয়েজবোর্ডের ঘোষণা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, ‘এখানে যে প্রতিবন্ধকতাটুকু, সেটা কিন্তু আমাদের করা না। সেটা আপনাদেরই সাংবাদিক মহলের করা। কাজেই কে এসব করছে সেটা আপনারাই দেখবেন। কিন্তু আমরা চাই এটা তাড়াতাড়ি কার্যকর হোক।’
নীতিমালা
সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪’র ওপর ভিত্তি করে একটি সম্প্রচার কমিশন আইনও প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গণমাধ্যমের বিষয়গুলো আইনগতভাবে চলতে হবে। ‘কেননা ইলেকট্রনিক মিডিয়াই সব থেকে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল রেখে সবকিছু একটি আইন মোতাবেক, নীতিমালা মোতাবেক এগিয়ে চলুক, সেটাই আমরা চাই।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, সব দেশেই সংবাদমাধ্যম যত স্বাধীনতাই পাক, সেগুলো একটা নীতিমালার মধ্য দিয়েই চলে।
অনলাইন গণমাধ্যম ও সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখছে। তাই এগুলোর জন্যও নীতিমালা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘কারণ সেখানে অনেক সময় এমন তথ্য দেয়া হয় বা এমন কথা বলা হয়, যা সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে বা আমাদের কোমলমতি শিশুদের কোমল মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের চরিত্র নষ্ট করে ফেলতে পারে। সেসব দিক বিবেচনায় রেখেই একটি অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা হওয়া একান্ত প্রয়োজন। সামাজিক মাধ্যমের ক্ষেত্রেও,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা
সরকার তথ্য অধিকার আইনের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সাত বছরে সারা বাংলাদেশে নিবন্ধিত হওয়া সংবাদপত্রের সংখ্যা ৭শ’র বেশি। সংবাদপত্রকে ইতোমধ্যে সরকার ‘সেবা শিল্পখাত’ হিসেবে ঘোষণাও দিয়েছে। এই ঘোষণা যেন কার্যকর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় কিছু কিছু রাজনৈতিক দল, এমনকি রাজনীতি করেন না এমন কেউ কেউ অভিযোগ তোলেন, বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। সেই কথাগুলো কখনো কোনো টকশোতে বলছেন, মাইকের সামনে বলছেন।
‘টেলিভিশনে সমানে কথা বলে যাচ্ছেন। তারপর যখন বলছেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, আমার প্রশ্ন: তাহলে কথাগুলো বললেন কীভাবে? এই যে এতগুলো কথা বললেন, বক্তৃতা দিলেন, কথাগুলো বলার সুযোগ কোত্থেকে আসলো?’
‘কখনোই প্রেসের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাইনি’
শিক্ষাজীবনের বাইরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে আসার পর জাতীয় রাজনীতিতে আজ শেখ হাসিনার ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। এই ৩৭ বছরে কখনোই গণমাধ্যমের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাননি বলে দুঃখ করেন তিনি।
‘সবসময় একটা বৈরিতা নিয়ে, সমালোচনার মধ্যেই আমাকে এগোতে হয়েছে। কিন্তু আমি কখনো সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামাইনি। কারণ আমি জানি আমি কী কাজ করছি। এবং ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে ফলাফল পাওয়া যায় বলেই আমি বিশ্বাস করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য যদি তিনি ভালো কিছু করে থাকেন, তা যেন কষ্ট করে প্রচার করা হয়। সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সরকারের করা কাজগুলো যেন দেশের কল্যাণেই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। এর উদ্দেশ্য, বাংলাদেশিরা যেন সবার মাঝে মাথা উঁচু করে চলতে পারে।