চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ওয়ালটন আজ বিশ্ব বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে: গোলাম মুর্শেদ

একটা সময় ছিল বিদেশ থেকে জাহাজ বোঝাই করে ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টস আসতো। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। জাহাজ বোঝাই করে বাংলাদেশের তৈরি ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টস রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। সে নিয়ে খ্যাতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই খ্যাতি আর গর্ব যারা এনে দিয়েছে তারা হলো বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। ওয়ালটনের রয়েছে অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান। এই গ্রুপের অন্যতম প্রাণ হচ্ছে ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আর এই প্রতিষ্ঠানে যিনি একবছর ধরে অত্যন্ত সুদক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি হলেন ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তরুণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ২০১০ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদেন ওয়ালটনে। মেধা ও কঠোর পরিশ্রমে তিনি রেফ্রিজারেটরের ম্যানুফ্যাকচারিং অপারেশনের দায়িত্ব এবং পরবর্তীতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে পদোন্নতি পান। প্রকৗশলী গোলাম মুর্শেদ দীর্ঘ এক দশক ধরে ওয়ালটনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন কওে আসছেন। উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের জন্য তিনি প্রশংসিত হন। তিনি বাংলাদেশের রিফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

আপনি বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ এর অন্যতম তরুণ মেধাবী একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর। সব কিছু মিলিয়ে আপনার কাজ করার সময়টাকে কীভাবে উপভোগ করছেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে ওয়ালটন হাই টেক ইন্ডান্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ বলেন, সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালো লাগে আমার। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ওয়ালটনকে অন্য একটা লেভেলে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে আমার বর্তমান ইচ্ছা, আমার লক্ষ্য, আমার ভিশন। সবাইকে নিয়ে এক সাথে পথ চলছি। পৃথিবীর জয়ের পথে আছি। সকলের ভালোবাসা, সহযোগিতা থাকলে আমার পক্ষে জয় করা সম্ভব।
অনেক চড়াই উতড়াই পার করে ওয়ালটন আজকের এ অবস্থানে এসেছে।

একটা সময় ছিল যে ওয়ালটনকে ব্র্যান্ড হিসেবে কেউ স্বীকৃতি দিতে চায়নি। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সুপার ব্র্যান্ড ওয়ালটন। আপনি এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

এ প্রসঙ্গে গোলাম মুর্শেদ বলেন, শুরুর যাত্রাটা খুব সহজ হয়না। ওয়ালটনের ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটি ছিল যে বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ড ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার করবে আবার সেটা বাংলাদেশের মার্কেট দখল করবে। মানুষের মনের আস্থার ব্যাপারটা শুরুর দিকে ছিলনা এটা সত্যি। কিন্তু একটা সময় যাওয়ার পর ওয়ালটনের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি, প্রোডাক্টের ভালো মান, একদম বেস্ট কোয়ালিটি। আমাদের এখানে আর অ্যান্ড ডি বিভাগ আছে। আমরা জার্মান হাই টেকনোলজি ব্যবহার করি। সব কিছু মিলিয়ে প্রোডাক্টের বর্তমান যে অবস্থা আমাদের ওয়ালটন প্রোডাক্টের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে আস্থা ভালোবাসা সেটার ওপর ভিত্তি করেই ওয়ালটন এখন সুপার ব্র্যান্ড। এ বছরে সুপার ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড জিতেছে ওয়ালটন। এখন পুরোটাই বাংলাদেশের মানুষের বর্হি প্রকাশ।

ওয়ালটনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ট্রানজেকশন বলা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আর অ্যান্ড ডিতে ও কিন্তু ওয়ালটন অনেকটাই এগিয়ে। এ সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাই?

এ প্রশ্নের উত্তরে গোলাম মুর্শেদ বলেন, ঘটনা সত্য। ইলেকট্রনিক্স এ বেস্ট আর অ্যান্ড ডি যদি থেকে থাকে সেটা ওয়ালটনই। ওয়ালটনে এখন প্রায় এক হাজার প্রকৌশলী এক সাথে কাজ করছে। জার্মানির হাই টেকনোলজি নিয়ে কাজ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ইনোভেশন হচ্ছে। আমরা প্রায় ২০০ টির মতো প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার করছি আমাদের নিজস্ব প্ল্যান্টে। সুতরাং ওয়ালটন ছাড়া আসলে কোনো অপসন নেই বাংলাদেশে। আমরা রিসার্চ ইনোভেশন সেন্টার নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা ইনোভেশন পার্ক নামে একটি বিল্ডিং প্রতিষ্টার কাজ শুরু করেছি। আগামী বছর হয়তো এটার ভিত্তিপ্রস্তর করব। আর আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে ল্যাব তৈরি করেছি, কোয়ালিটি টিম তৈরি করেছি, আর অ্যান্ড ডি টিম তৈরি করেছি, সেটা নিয়ে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। বিশ্বজয় করার স্বপ্ন। আমি আশাবাদী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে যদি বেস্ট আর অ্যান্ড ডি হয়ে থাকে সেটা হবে বাংলাদেশের ওয়ালটনই।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ালটনের মাধ্যমে আর অ্যান্ড ডি ফেয়ার করা হচ্ছে যা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এ সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাই?

এ প্রসঙ্গে গোলাম মুর্শেদ বলেন, এটা হচ্ছে ইনোভেশন সামিট। আমাদের এতো এতো টেকনোলজি, এতো ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, ইনোভেশন হচ্ছে আমরা চাই, আমরা কি করছি এটা সবাইকে জানাতে। বাংলাদেশের মানুষ জানবে, বিশ্ব জানবে, আসলে আমাদের ভেতরে কি হচ্ছে। আমরা প্রযুক্তির যে উন্নয়ন ঘটাচ্ছি, বাংলাদেশে একটা বিপ্লব ঘটাচ্ছি, এটা সবার সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি। আমরা চাই, সবাই জানুক বাংলাদেশে কী হচ্ছে। বাংলাদেশ যে সম্ভাবনাময় একটা জায়গা। ওয়ালটন সেটা দেখিয়ে দিতে চাচ্ছে যে বাংলাদেশেই এই প্রযুক্তি নিয়ে কি কি করা সম্ভব।

একজন তরুণ মেধাবী ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে আপনি গত এক বছর ধরে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ওয়ালটনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কী?

এ প্রশ্নের উত্তরে গোলাম মুর্শেদ বলেন, ওয়ালটন বাংলাদেশের শীর্ষ জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড। এ দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় ওয়ালটন আজ বিশ্ব বাজারেও নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশে ওয়ালটনের তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।বৈশ্বিক বাজারে প্রতিষ্ঠানের পদচিহ্ন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমাদের বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা। পাশাপাশি ইউেিরাপ ও সার্কভুক্ত দেশ গুলোতে পণ্য রপ্তানি করছি। চীন থেকে আমদানিতে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশ কিছু ক্রেতা আসছেন, তারা বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিতে আগ্রহী। অতি সম্প্রতি আমরা হুন্দাইয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তারা ভারতের বাজারে ওয়ালটনের তৈরি ফ্রিজ ও এসি বিক্রি করবে। এরকম বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানিকে আমরা টিভি, ফ্রিজ, এসি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে দিচ্ছি। এ সব পণ্যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ যুক্ত থাকছে। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে তৈরি উচ্চমানের পণ্যের ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। শিল্পোন্নত ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ছে। নতুন নতুন আরও অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে আমাদের সঙ্গে পন্য কেনার চুক্তি করতে আসছে।

ওয়ালটন ইনোভেশনে বিশ্বাস করে। সেটির প্রভাব আমরা দেখেছি, আপনাদের প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে। একে সময় একে প্রোডাক্ট নিয়ে আসেন আপনারা। আবার সেটাকে বার বার ইনোভেট করে আরও অনেক বেশি সুন্দর এবং যুগপোযোগী করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে নানা রকমে ইনোভেশনকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দিতে চান?

গোলাম মুর্শেদ বলেন, লক্ষ্য যখন বিশাল। কাজের শুরুটাও খুব বিশাল ভাবে হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমাদের ইনোভেশন সামিট হবে। সামিটের মাধ্যমে আমরা দেখাতে পারব আমাদের বর্তমান কী অবস্থা এবং আগামী ১০ বছরের ইনোভেশন নিয়ে যে আমাদের প্ল্যান, প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় জায়গা থেকে আমাদের পরিকল্পনা গুলো এই সামিটে আপনারা দেখতে পারবেন।

ইতোমধ্যে ওয়ালটনের পণ্য বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে গর্বের সাথে আপনারা ডেলিভারি করছেন। পৃথিবীর আর কোনে কোনে দেশে ওয়ালটনের পণ্য ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছেন?

এ প্রসঙ্গে গোলাম মোর্শদ বলেন, ভিশন গো গ্লোবাল ২০৩০ অর্জনে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার সমন্বয়ে রোড ম্যাপ তৈরি করেছে ওয়ালটন। যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ওয়ালটন রপ্তানি ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরের বছর (২০২৩-২৪) ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নতি করার টার্গেট। সেজন্য ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত বিশ্বের বাজারে রপ্তানি বানিজ্য সম্প্রাসারণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ড বিজনেস বাড়ানোর পাশাপাশি ওইএম (অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার) হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্র্যান্ডের নামে পণ্য তৈরির মাধ্যমেও রপ্তানি বানিজ্য সম্প্রাসারন করছে ওয়ালটন। এছাড়া বিশ্বের ৫টি দেশে শাখা অফিস খোলার উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে ওয়ালটন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের প্রায় ৪০টি দেশে। এর মধ্যে ইউরোপের জার্মানি, পোলান্ড, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ইতালি, রোমানিয়া সহ মোট ১০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। আমাদের বিগ টার্গেট হচ্ছে আমেরিকার মার্কেট। খুব সম্ভাবনাময় জায়গা এটা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে পুজিবাজারে বিনিয়োগ বিষয়ক রোড শোতে আমরা ছিলাম। ধন্যবাদ কমিশনকে এরকম একটি রোড শো আয়োজন করার জন্য। এই রোড শোতে আমি দেখেছি বিশাল একটা সম্ভাবনাময় মার্কেট। সেখানে একমাস থেকে মার্কেটের গবেষণা করেছি। এতে সম্ভাবনা গুলো দেখেছি। আমরা খুব শিগগিরই নিউইয়ের্ক ওয়ালটনের অফিসের কার্যক্রম শুরু করতে চাই। আমেরিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাছে যেতে চাই, তাদের সেবা দিতে চাই।

বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ও গবেষনায় উন্নতির জন্য বিভিন্ন দেশে কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পণের মান উন্নয়নে গবেষনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় লিয়াজো কার্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ বলেন, ওয়ালটনকে বৈশ্বিক কোম্পানিতে রূপান্তরের চেষ্টার অংশ হিসেবে দুই বছর আগেই আমরা ওয়ালটন করপোরেশন ইউএস এ নামের একটি লিয়াজোঁ কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটির কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। এখন এসে কার্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ওয়ালটনের এতো সাফল্যের পেছনের কারণ কী?

প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন ক্ষমতাই ওয়ালটনকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে। পাশাপাশি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নতুন পণ্যের কাস্টমাইজাড ওরিয়েন্টেশনের ভ্যারিয়েশনও ওয়ালটনকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে। গ্রাহকের ভালোবাসা পেতে এ দুটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করছে ওয়ালটনের ক্ষেত্রে। সব পণ্যের জন্য রয়েছে আর অ্যান্ড ডি বিভাগ। এই বিভাগটি পণ্যের গুণগত মান বিশ্লেষন করছে প্রতিনিয়ত। যোগ করছে নতুন নতুন সব ফিচার। এসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স বাজারে বিপ্লব করে চলেছে ওয়ালটন। ২০১০ সাল থেকে ২০২১। আমি বলবো, এই দশককে তাই বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জগতের বিপ্লবের দশক বলা হয়।

ওয়ালটন ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। আপনাদের প্রায় ২০০টির বেশি বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট রয়েছে এর মধ্যে আসলে ইলেকট্রনিক্স প্রোডাক্টস, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস অন্যতম। আপনাদের আর কি কি প্রোডাক্টস রয়েছে?

এ প্রশ্নের উত্তরে গোলাম মুর্শেদ বলেন, আমাদের মেইন প্রোডাক্টস হচ্ছে রিফ্রিজেরেটর। আমাদের বিভিন্ন রকমের রিফ্রিজেরেটর রয়েছে। ডাবল ডোর, (সাইড বাই সাইড) নন ফ্রস্ট, ফ্রস্ট, টেলিভিশন, স্মার্ট টেলিভিশন, এলইডি টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, লিফট, ভেলেন্ডার, নতুন যুক্ত হয়েছে ভয়েজ এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওভেন, ক্যাটলিন, ইত্যাদি। এগুলো হলো মেইন প্রোডাক্টস। প্রত্যেকটিরই ১৫ থেকে ২০টির সাব মডেল আছে। সব মিলিয়ে আমাদের ২০০টির বেশি প্রোডাক্টস বাংলাদেশের মার্কেটে বিচরণ করছে।

আমরা দেখেছি যে শেয়ার মার্কেটে এন্ট্রি করার প্রথম দিনেই ওয়ালটন হাই টেক সর্বোচ্চ প্রাইজ পেয়েছে। সেই জায়গায় আপনারা করোনার মহামারি সময়ে আপনাদের শেয়ার হোল্ডারদের সর্বোচ্চ ডিভিডেন্ড দিতে চেষ্টা করেছেন। সেই সম্পর্কে কিছু জানতে চাই?

এ প্রসঙ্গে গোলাম মুর্শেদ বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় আমাদের প্রথম যে চ্যালেঞ্জটা ছিল ওয়ালটন পরিবারের শক্তি। মেইন পাওয়ার। আমাদের ওয়ালটন পরিবারে যারা আছেন, করোনার মধ্যে তাদের কাউকে আমরা ছাটাই করিনি। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি। ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে আমাদের প্রোডাক্টের যে ডিমান্ড ছিল। সেই প্রোডাক্ট আমরা ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পেরেছি এটা আমাদের আনন্দের বিষয়। এই প্রোডাক্ট পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমেই কোম্পানি স্বাভাবিক নিয়মে যে মুনাফা অর্জন করার কথা ছিল সেটা করেছে। ডিভিডেন্ড ফাইন্যান্সিয়ালে টু ফিফটি পারসেন পাবলিক শেয়ার হোল্ডারকে আমরা দিয়েছি।
আমাদের সব সময় টাগের্ট থাকে ওয়ালটনের শেয়ার কিনে কোনো শেয়ার হোল্ডার যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। শেয়ার মার্কেট উঠা নামা হবে। সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা চেষ্টা করি যারা আমাদের শেয়ার কিনেছেন তারা যেন কোনো ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হন। এজন্য মুনাফা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা দিন রাত কষ্ট করে যাচ্ছি।

আমরা জানি যে ওয়ালটন ইমপোর্ট সাবসিডিয়ারি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু সেই জায়গা থেকে দেশের চাহিদা পুরণ করে ওয়ালটন এখন বিশ্বের ২০টি দেশে এক্সপোর্ট করছে। এখন আপনারা কোন অবস্থানে আছেন?

এ প্রসঙ্গে গোলাম মুর্শেদ বলেন, এক যুগ আগে বাংলাদেশে এই ইন্ডাস্ট্রিজ আমদানি নির্ভর ছিল। সফলতা হচ্ছে বাংলাদেশ এই ইন্ডাস্ট্রিজতে উৎপাদন নির্ভল হতে পেরেছে। এই ইন্ডাস্ট্রি যে রেভিনিউ আর্ন করছে সেটা একটা সময় দেশের বাইরে চলে যেত। এখন এই ইন্ডাস্ট্রির পুরো রেভিনিউ, বাংলাদেশের টাকা বাংলাদেশেই থাকছে। সর্বপরি ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের জায়গা করে দিয়েছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের এটিই সফলতা। আরেকটি সফলথা হচ্ছে একটা সময় যখন বিদেশি ব্র্যান্ড গুলো যে দামে প্রোডাক্ট বিক্রি করতো। যদিও তাদের মার্কেট শেয়ার খুবই নগন্য। ওয়ালটনের চাপে পড়ে তারা সেই উচ্চদামে প্রোডাক্ট এখন আর বিক্রি করতে পারে না। হয়তো তারাও তাদের মুনাফা ছেড়ে দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ওয়ালটনের জন্য। সর্বপরি কথা হচ্ছে ওয়ালটন বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড এই ইন্ডাস্ট্রিজতে আসার কারণে সব ধরনের ক্রেতা পরক্ষভাবে বা পতক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এটাই ওয়ালটন ব্র্যান্ডের সফলতা।

এখন বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি নাম ওয়ালটন। কিন্তু কয়েক বছর আগেও ওয়ালটন নামটি আমাদের কাছে পরিচিত ছিল না। ওয়ালটন নামটি আপনাদের প্রতিষ্ঠানের শুরুর সময় কীভাবে এলো?

এ প্রশ্নের উত্তরে গোলাম মুর্শেদ বলেন, ওয়ালটনের শুরুর ইতিহাস যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে পাঁচ ভাইয়ের স্বপ্নের কথা। পাঁচ ভাইয়ের স্বপ্নের ফলাফল হচ্ছে আজকের ওয়ালটন ব্র্যান্ড। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট। ওয়ালটন নামের উৎস হচ্ছে তারা সব সময় বিশ্বাস করতেন দেশের জন্য কিছু একটা করতে। ওয়ালটন নামের W থেকে উইন্ড, আর অল্টারেশন থেকে LT এসেছে। উইন্ড অফ অল্টারেশন। হাওয়া পরিবর্তন। এই হাওয়া পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ওয়ালটন। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিজ সেটা ম্যানুফ্যাকচার করে পৃথিবীর বুকে মাথা তুুলে দাঁড়াবে। দিনে দিনে ওয়ালটনের জনপ্রিয়থা বাড়ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন ওয়ালটন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

দেশে এবং বিদেশে ওয়ালটন পণ্যের কাষ্টমারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?

গোলাম মুর্শেদ বলেন, পুরো দেশবাসীর ব্র্যান্ড হচ্ছে ওয়ালটন। ওয়ালটন আমাদের না। ওয়ালটন আপনাদের সবার। ওয়ালটন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে ওয়অলটন আজকে এই পর্যায়ে এসেছে। আমি আশা করব আপনাদের এই ভালোবাসা অটুট থাকবে। ওয়ালটন ব্র্যান্ডে প্রতি যে আস্থা ছিল এটা অবিচল থাকবে। আপনাদেরকে সঠিক মানের, সঠিক দামের প্রোডাক্ট উৎপাদনের জন্য আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। ওয়ালটন আপনাদেরই। আপনাদেরই ভালোবাসা।

আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

এ প্রশ্নের উত্তরে গোলাম মুর্শেদ বলেন, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি হতে চায় ওয়ালটন হাই- টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। এক সময় স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি হওয়া। সে সময় অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়নি। কারণ বাজারে তখন ছিল অনেক বড় বড় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড। বিশ্বখ্যাত ওই সব ব্র্যান্ডের পথ্য সুপরিচিত ও সহজলভ্য ছিল বাংলাদেশেও। তাই এ দেশের বাজার দখলের লড়াইয়ে সবাইকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষস্থান অর্জন করাটা ছিল খুবই কঠিন। কিন্তু ওয়ালটন সেটা করে দেখিয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের বাজারে ওয়ালটন ফ্রিজ ১ নম্বর স্থানে রয়েছে। দেশের প্রায় ৭৪ শতাংশ বাজার তাদের দখলে। এখন ওয়ালটনের টার্গেট ২০২৫ সালে বিশ্বের সেরা ১০টি এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা পাঁচটি ব্র্যান্ডের একটিতে পরিণত হওয়া। সে টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন।