প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে। বিভিন্ন ধরণের সভায় আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন ইস্যু। এক সভায় বাংলাদেশ এবং এর আঞ্চলিক অর্থনীতিকে তুলে ধরতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ এমন একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে। তরুণ জনগোষ্ঠী, স্বল্প খরচে শ্রমিক, উদ্যোক্তা প্রতিভা এবং সম্ভাবনাময় ভোক্তা বাজারের কথা চিন্তা করেই এমন আলোচনা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করি। তবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে আমাদের অর্থনীতি যে একটি সুদৃঢ় অবস্থানের দিকে যাচ্ছে সেই বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন। জিডিপি’র সাফল্য অবশ্য আলোচনায় এসেছে। রেমিট্যান্সের কারণে বাণিজ্য ঘাটতিগুলো প্রায়ই আমরা উতরিয়ে যাই, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ভেতরে ভেতরে দুনীতি এবং দানা বেঁধে ওঠা জঙ্গিবাদের হুমকিও আছে আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর। আমাদের এ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্য বহু দেশের তুলনায় দ্রুতগামী, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। একটি জরুরি বিষয় হলো ভৌগলিক দিক থেকে আমরা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ দুটি আন্তর্জাতিক বাজার- যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন- এই দুটি দেশকে কতোটা আমরা আকৃষ্ট করতে পেরেছি, সেটি আলোচনা এবং কিছু কৌশলের বিষয়। এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের রাস্তাটা সুবিস্তৃত করার প্রয়োজনে কূটনৈতিক মেধা ও কৌশলের প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সভায় বাংলাদেশে অধিক হারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাতে প্রফেসর ক্লাউসকে অনুরোধও করেছেন শেখ হাসিনা। বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে দেশে নানারকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই সুযোগটা গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি। তবে বিশ্ব বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং বিষয়টির দিকেই বেশি জোর দিয়েছেন ক্লাউস যা সময়োপযোগী এবং যৌক্তিক। অন্য একটি মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী সার্কের কার্যকারিতা হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এই আঞ্চলিক জোট সক্রিয় আছে। আমরা মনে করি, সার্ক অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কার্যকরী আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ এই অঞ্চলের জনগণের অধিকতর উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করছে বলেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল) চুক্তি সই করেছে। আমরা জানি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরো জোরদার করতে বিসিআইএম-ইসি (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার-অর্থনৈতিক করিডোর) চুক্তি সম্পাদনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদী অনেকেই। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অনেকেই উচ্চাশা পোষণ করেছেন দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যত সম্পর্কে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সবগুলো খাত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ফোরামে। যে বিষয়টি আমাদের নজর কেড়েছে তা সব শেষে উল্লেখ করতে চাই। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে। যেহেতু চীন এবং ভারতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশেরও সুযোগ থাকছে এই বিশাল বাজারটি ধরার। আমরা বিশ্বাস করি, অন্যান্য সম্ভাবনার জায়গাগুলোতে ভালো করার পাশাপাশি, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্বল্প মূল্যে ম্যানুফ্যাকচারিং এর জায়গাটিতে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই বড় একটি জায়গা দখল করে নিতে পারবে। নিশ্চয়ই সরকারও এইসব সম্ভাবনাময় দিকগুলো নিয়ে ভাবছে। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই আমরা। এমন আশা আমরা করতেই পারি।