একটি হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ বাপ্পির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এবিষয়ে তদন্ত শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ বাপ্পিকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবেনা এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিষ্ক্রীয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজি, রাজশাহীর এসপি ও পুঠিয়া থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের আগামি চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল পুঠিয়া উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে নুরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে নির্বাচনে ফল পালটে আবদুর রহমান পটলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয় বলে নুরুল ইসলামের পরিবার দাবি করেন।
পরবর্তীকালে এ নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলামসহ পরাজিত তিন প্রার্থী আটজনকে বিবাদী করে মামলা করেন। এরপর আদালত শ্রমিক ইউনিয়নের সব কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
সেসময় তার সঙ্গে নুরুল ইসলামও ছিলেন এবং তখন বিবাদীদের সঙ্গে নুরুলের বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টা থেকে নুরুল ইসলামের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এরপর নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় এজাহার দাখিল করেন। ওই এজাহারে পুঠিয়া সড়ক পরিবহণ মটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার সঙ্গে ওসি শাকিল উদ্দিনের সম্পৃক্তার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এটা দেখার পর নিগার সুলতানার এজাহার গ্রহণ না করে ওসির সম্পৃক্ততার কথা বাদ দিয়ে এজাহার সংশোধন করতে বলা হয়। এরপর নিগার সুলতানা ওসির নাম বাদ দিয়ে মূল হত্যাকারী হিসেবে আব্দুর রহমান পটলসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দাখিল করেন। থানা সেই এজাহার রেখে দেয়।
পরে ওই রাতে নিগার সুলতানাকে থানায় ডেকে নিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর এবিষয়ে থানা থেকে কোনো তৎপরতা না দেখে নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম পুঠিয়া উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নালিশী মামলা করেন। এই মামলায় আব্দুর রহমান পটলসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। কিন্তু এসময় পুঠিয়া থানা থেকে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর করা একটি এজাহার আদালতে হাজির করে থানা পুলিশ।
কিন্তু এই এজাহারের বিষয়ে নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই এজাহার তাদের নয়। পরবর্তীকালে নিহত নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৮ জুলাই আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাতে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে রিট করেন নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা। ওই রিটের শুনানির পর আজ হাইকোর্ট ওসির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন।
এদিকে গত ১৮ জুন রাজশাহীর এসপি এক সংবাদ সম্মেলন করে নিহত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ আনেন। এসপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নুরুল ইসলামের সমকামিতার অভ্যাস ছিল। এলাকার এক কিশোরকে তিনি এ কাজে বাধ্য করতেন। ১০ জুন রাতেও নুরুল ইসলাম ওই কিশোরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন।
একপর্যায়ে ওই কিশোর তাকে ইটের আঘাতে হত্যা করে। তাই ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’ তবে নিহতের পরিবার এবক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে গণমাধ্যমে দাবি করেন।