হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত সম্ভব সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কাদেরকে দেখার পর তার পরামর্শের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিঙ্গাপুরে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কাদেরের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে ডা. দেবী শেঠি বিএসএমএমইউ’র মেডিক্যাল বোর্ডের কাজের প্রশংসা করেছেন।
বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য বলেন, ওবায়দুল কাদের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অনিয়মিত ছিলেন। আগেও একবার তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এরপর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলা হলেও নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা বলে তিনি ভর্তি হননি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও পরবর্তী চিকিৎসার জন্য আসেননি তিনি।
ডা. দেবী শেঠির পরামর্শ ও মূল্যায়নের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘দেবী শেঠি আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে: আপনাদের কার্ডিয়াক টিম যেভাবে কাজ করেছেন সেটা এক্সসিলেন্ট। ভাবী (ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী) সামনে ছিলেন… তার সামনেই শেঠি বলেছেন, ইউরোপ-আমেরিকাতেও এর থেকে ভালো চিকিৎসা সম্ভব না। আমাদের ওখানেও পলিটিশিয়ানদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেটা ফলো করি, আমরা আপনাদেরও সেটা ফলো করার পরামর্শ দিবো। যেহেতু ভিজিটর কন্ট্রোল করা সম্ভব হয় না। তাই দেশের বাইরে চিকিৎসা করা ভালো।’
ওবায়দুল কাদেরের রক্তে সংক্রমণ রয়েছে বলেও জানান বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য। তিনি বলেন, ডা. শেঠির পরামর্শ মতে, ওবায়দুল কাদেরকে অন্য দেশে স্থানান্তরের এটিই উপযুক্ত সময়। এরপর কোনো কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তর করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।
‘তিনি আমাদের ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বাইরে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সেটা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি৷ তিনিও সিঙ্গাপুরে নেয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে নিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে,’ জানান ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুর ১টার কিছুক্ষণ আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বিশ্বের অন্যতম সেরা হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র বেঙ্গালুড়ু নারায়না ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠি। বিএসএমএমইউ’র কার্ডিয়াক বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফ্ফর আহমেদ বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
ঢাকায় পৌঁছেই সরাসরি হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে চলে যান এই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় বিএসএমএমইউ’র কার্ডিয়াক বিভাগীয় চেয়ারমান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান এবং কার্ডিয়াক সার্জন অধ্যাপক ডা. অসিত বরণ অধিকারী ডা. দেবী শেঠির সঙ্গে ছিলেন।
রোববার ভোরে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রোববার সকাল পৌনে আটটার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউ’র সিসিইউ’র নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।