চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘অগ্নিকন্যা’র গল্প

পাকিস্তানের প্রস্তাবক হয়েও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কূটকৌশলে পূর্ব বাংলার তুমুল জনপ্রিয় নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক হয়ে গেলেন ‘দুশমন’। দেশভাগের আগে আগে পাকিস্তান আন্দোলনের আরেক শীর্ষ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকেও মুসলিম লীগ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এতে কপাল খোলে জিন্নাহ-লিয়াকত খাঁর প্রিয়ভাজন খাজা নাজিমুদ্দিনের। উচ্চাকাঙ্ক্ষী জিন্নাহ দেশভাগের প্রাক্কালে পাকিস্তানের হিস্যা আদায়ের চেয়ে ‘বড় লাট’ হওয়ার ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। আর এটাই পাকিস্তানের জন্য ‘কাল’ হলো।

লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের প্রতিহিংসার আগুনে জ্বললো পাকিস্তান। তাতেও জিন্নাহ সাহেবের খায়েশ মিটলো না। তিনি নিজে উর্দুভাষী না হয়েও খাজা সাহেবের পরামর্শে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। আর তাতে ফুঁসে উঠল বাঙালি। রাস্তায় নামলেন শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবসহ আরো অনেকে। রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলো ভাষার দাবি। আর এতে শোষণ নিপীড়ন অনেকটাই বেড়ে গেলো। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ কিছুতেই মানতে পারলো না। শুরু হলো গোলাম মোহাম্মদ-ইস্কান্দার মির্জাদের ষড়যন্ত্র। তারাও অবশ্য দোর্দন্ড প্রতাপশালী সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের কাছে পরাস্ত হলেন। বন্দি হলো রাজনীতি। কারাগারে বসে শোষিত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শেখ মুজিব আঁকালেন ছয় দফার ছক।

দেশ ও রাজনীতির পেছনের এমন আরো অনেক অজানা গল্প উঠে এসেছে ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘অগ্নিকন্যা’য়। সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামালের ঐতিহাসিক উপন্যাস এটি। এবারের বইমেলায় পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত উপন্যাসটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।

‘অগ্নিকন্যা’ সম্পর্কে বইটির ভূমিকায় লেখক বলেছেন- ‘অগ্নিকন্যা ঐতিহাসিক উপন্যাস, ইতিহাস গ্রন্থ নয়। অগ্নিকন্যা এই উপন্যাসের প্রতীকী নাম। কাজেই শুধু একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস রচিত হয়নি। একটি বিশেষ সময়কে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এর সময়কাল হচ্ছে ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ। দেশভাগ ও তার পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের নায়কদের ভূমিকা তুলে ধরার ক্ষেত্রে কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। ঘটনা পরম্পরায় যাঁর যে ভূমিকা ছিল তা তুলে ধরতে কার্পণ্য করিনি।’

আলাপকালে তিনি বলেন, “বাংলা সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই কাজ করে যাবো। আরো বড় কিছু কাজ করার পরিকল্পনা আছে আমার। এমন কিছু কাজ করতে হবে যা বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী আসন করে নিতে পারে। আমার ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে লেখালেখি। আমি নিরলসভাবে সেটাই করছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কাজটি করে যেতে চাই। সৃষ্টিশীলতায় মুখর থাকতে চাই। এ উপন্যাস রচনা করতে আমাকে প্রচুর পড়ালেখা করতে হয়েছে।  লেখার প্রয়োজনে কোনো কোনো গ্রন্থ থেকে উদারভাবে অনেক তথ্য নিয়েছি। ‘অগ্নিকন্যা’ প্রথম খণ্ড লেখা হয়েছে। আরো দুইটি খণ্ড লেখার ইচ্ছা আছে।”

সাংবাদিকতা পেশার ব্যস্ততার মধ্যেও যাঁরা সৃষ্টিশীল কাজের ধারা বজায় রাখতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে মোস্তফা কামাল উল্লেখযোগ্য।  ফি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার লেখা একাধিক বই প্রকাশিত হয়। তিনি আড়াই দশক ধরে নিয়মিত গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, সায়েন্স ফিকশন, টিভি নাটক ও শিশু-কিশোরদের উপযোগী রচনা লিখছেন। কলাম লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তা রয়েছে তার। এর আগের বছরে গ্রন্থমেলায় ‘চাঁদের আলোয় রাগিব আলী এবং সে’ শিরোনামের একটি নতুন ধরনের উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিলো। অন্যদিকে ‘রুবীর কালো চশমা’ বইটিও সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। ‘ডাকাতের কবলে ফটকুমামা’ নামের কিশোর উপন্যাস লিখে মোস্তফা কামাল ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন।

উল্লেখ্য, মোস্তফা কামালের রঙ্গব্যঙ্গ সিরিজ বেশ জনপ্রিয়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘পাগলছাগল ও গাধাসমগ্র-৯’। আর সায়েন্স ফিকশন ‘বিমান রহস্য’ ও ‘হাসির চার উপন্যাস’ সংকলন দুটিও দৃষ্টিনন্দন। এছাড়া ছয়টি সায়েন্স ফিকশন ও পাঁচটি গোয়েন্দা উপন্যাসের সংকলন নিয়ে মোস্তফা কামালের আরো দুটি গ্রন্থ কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। মোস্তফা কামালের ‘জননী’ উপন্যাসটি ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০১১ সালের তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘জনক জননীর গল্প’ প্রকাশিত হয়। এসব গ্রন্থের আগেও তিনি ‘সিরিয়াস’ ধারার উপন্যাস রচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এর আগে ‘বারুদ পোড়া সন্ধ্যা’ (২০০৫), ‘হ্যালো কর্নেল’ (২০১০), ‘জিনাত সুন্দরী ও মন্ত্রী কাহিনী’ (২০১২), ‘কবি ও একজন নর্তকী’ (২০১৩) নামে উপন্যাস লিখেছেন। তার সংকলন গ্রন্থ ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’, ‘চার জয়িতা’, ‘চার অপরূপা’ ও গবেষণাগ্রন্থ ‘আসাদ থেকে গণঅভ্যুত্থান’ (১৯৯৩) খ্যাতি অর্জন করেছে। অদ্যবধি তিনি প্রায় ৯০টি গ্রন্থ লিখেছেন।

(লিখেছেন শরিফুল ইসলাম পলাশ)