বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণার পর ইতোমধ্যে তাদের অনেকটা সমন্বয় হয়ে গেছে। এমনকি উভয় জোট অভিন্ন প্রতীক অর্থাৎ ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে সম্মত বলেও জোটের নেতারা জানিয়েছেন।
রোববার দুপুরে ২০ দলীয় জোট গুলশান বিএনপি চেয়পরপার্সনের রাজনৈতিক কাযালয় থেকে আর ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা দেয় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে। ২০ দল আর ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণাপত্র ছিলো প্রায় একই রকম। ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলে জানায় জোট দুটি। তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং আন্দোলন একত্রে চলবে বলেও জানায়। সেই সঙ্গে নির্বাচনী তফসিল পেছানোর দাবি করে।
কাগজে কলমে আলাদা জোট হলেও দুই জোটই মূলত বিএনপি নেতৃত্বে। যদিও কয়েকদিন ধরে সাবেক বিএনপি নেতা ও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদ নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০ দলে। বিএনপি থেকে আগে থেকে সমন্বয় করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অপরপক্ষে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলেও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকায় কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে জোট বা সমন্বয় করবে না ড. কামালসহ অন্যরা বলে গেলেও আদতে তা কাগুজে কথা। অন্তরালে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের মধ্যকার বৈঠক এবং সমন্বয় হয়েছে। আগামী নির্বাচন করবে একসাথে। আর সে নির্বাচনে প্রতীক হবে অভিন্ন- ধানের শীষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় কমিটির একজন সদস্য বিষয়টি চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
ঐক্যফ্রন্টের ওই সদস্য বলেন, ২০ দলের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক হয়েছে। তাদের মধ্যকার সমন্বয় কিভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরশুদিন আবারও বসা হবে। তবে এটা সত্য যে, ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্ট কমন প্রতীকে নির্বাচন করবে।
সেটি কি ধানের শীষ; এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাহলে আর কী? জনপ্রিয় প্রতীক তো একটাই। জামায়াতের নমিনেশনও ধানের শীষে হবে। এগুলো ভাগ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।
জানা গেছে, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই জামায়াত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। জামায়াত সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, জামায়াত ১৬টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করছে।
সম্ভাব্য যে আসন গুলোতে জামায়াত ধানের শীষের প্রতীক পাচ্ছে তা হলো- মো:আবু হানিফ, দিনাজপুর -১; আনোয়ারুল ইসলাম দিনাজপুর-৬; গোলাম রাব্বানী, রংপুর-৬; মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৪; মাওলানা আমজাদ হোসেন, গাইবান্ধা-৫; নুরুল ইসলাম বুলবুল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩; রফিকুল ইসলাম খান, সিরাজগঞ্জ-৪; আবু সাইদ মো: শাহদাৎ, যশোর-২; অধ্যাপক মতিউর রহমান, ঝিনাইদহ -৩; ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন, পাবনা-১; অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট-৪; মাও: আবুল কালাম আজাদ, খুলনা-৬; গাজী নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা- ৪; শামীম সাইদী, পিরোজপুর-১; ডা: সৈয়দ আ: মো: তাহের, কুমিল্লা-১১; আ ন ম শামশুল ইসলাম, চট্রগ্রাম- ১৫।
অবশ্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর বিষয়টি সেভাবে স্বীকার করতে নারাজ।
তিনি বলেন, জামায়াত কী চায় সেটা প্রকাশ করলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। তারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে নাকি স্বতন্ত্র করবে সেটা আগে নিশ্চিত করুক। এটা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট দুটি রাজনৈতিক জোট। তাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। অবাধ একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। দেশের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি অবসান ঘটানো। আর সম্প্রতি গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে চায়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বেগম জিয়া, দলের নেতৃবৃন্দ এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করেছে। একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য কী কী করতে হবে সেটা বলেছে। ১১ লক্ষ্য ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করতে চায়। এটা তো ভালোই।
“বিএনপি নেতৃত্বাধীন দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে-একথা তারা বলেছে। তারা চাইলে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করবে। আর যারা নিজেদের প্রতীক না নিয়ে জোটের প্রতীক তথা ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে চায় সেটাও সম্ভব।’’
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর ২০ দলের সমন্বয়ের বিষয়টিকে এক প্রকার স্বীকার করে বলেন, সমন্বয় হতে পারে। সেটা আলোচনার মাধ্যমে হবে। আলোচনা চলবে। মূলত জোটের যেখানে যাকে দিয়ে জয় লাভ করা যাবে তাকে সেখানে দেয়া হবে। একই প্রতীকে হতে পারে। এটা আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হবে। এখনো বহু সময় বাকি।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না চ্যানেল আই অনলাইনকে ২০ দলের মধ্যকার সমন্বয়, জোটের নির্বাচনী প্রতীক এসব নিয়ে এখনই বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, এগুলো এখনো বলার মতো নয়। তবে জোটগুলো একটি কমন মার্কা নিবে। হয়তো আবার জোটের শরীকরা আলাদাভাবেও মার্ক নিতে পারে। তবে সবাই মিলে একটি মার্কা নিতে পারলে তো ভালো।
আর জামায়াত সংশ্লিষ্ট ২০ দলের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো বিএনপির সাথে ঐক্য করেছি। তারা সমন্বয় করে নেবে। যেমন ২০ দলের তিন চারজন নেতা আমাদের সমাবেশে এসেছেন, যোগ দিয়েছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। এভাবেই সমন্বয় হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা ২০ দলের ঐক্যটা সেভাবে চাই না। আগেই বলেছি, জামায়াতসহ সমঝোতা করবো না আমরা।
কিন্তু জামায়াতকে নিয়েই তো আগানো হচ্ছে এমন প্রশ্নে মান্না বলেন, সেটা বিএনপি নিজেদের মতো করে করছে।
মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের নিবন্ধন নেই বিধায় তিনি কোন প্রতীকে নির্বাচন করবেন এমন প্রশ্নে বলেন, আমি বগুড়া দুই আসন, শীবগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবো। তবে প্রতীক ঠিক করতে হবে। এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয় এবং অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ বিষয়গুলো জোটের সমন্বয়ক যারা আছেন তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তারা এসব নিয়ে বলতে পারবেন। আমরা আপাতত সোমবার ও মঙ্গলবার বিএনপির নেতাদের মাঝে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করছি।