দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত ও নামি-দামি বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে এনে দিলেন হাইকোর্ট। এর আগ পর্যন্ত ভোক্তাদের কেউ ভাবতেও পারেননি এমন নামি-দামি কোম্পানি এসব অপতৎপরতায় যুক্ত থাকতে পারে। অথচ তাদের সরল বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করে ওই সব ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধোঁকা দিয়ে গেছে।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা ১৮টি কোম্পানির ৫২টি খাদ্যপণ্য বিক্রি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, এসব পণ্যের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে থাকা ওই কোম্পানিগুলোর মানহীন পণ্য অপসারণ করে ধ্বংস এবং নতুন করে উৎপাদন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে এ সংক্রান্ত রিটের আদেশ দিতে গিয়ে হাইকোর্ট খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার ব্যপারে আপোস করার কোনো সুযোগ নেই। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রত্যেকটা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।’
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিএসটিআই-এর মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা ১৮টি কোম্পানির মধ্যে কয়েকটি বেশ নামি কোম্পানি। সুদীর্ঘ বছর ধরে তারা ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। কোনো অজুহাতই কোম্পানিগুলো এমন কাজে জড়িত হতে পারে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, এই সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোই ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামো অনুসারে সর্বময় ক্ষমতা সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। তাই কোনো বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হলে তার ইতিবাচক সম্মতির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্যই হাইকোর্ট মাদকবিরোধী অভিযানের উদাহরণ টেনে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র মতো কঠিন পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কেননা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ আকার ধারণ করেছে, এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
আমরা মনেকরি, হাইকোর্ট যে আহ্বান জানিয়েছেন; তাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের জীবন বাঁচাতে, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধই ঘোষণা করতে হবে। কঠোর পদক্ষেপই পারে এই খাদ্য নামের বিষের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে।