নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় এর আগে তোলপাড় শুরু হয়েছিলো সারাদেশে। এবার ঘুষের মামলায় তাকে কারাগারো পাঠানোর ঘটনায় আবারো ফুঁসছে সারা দেশ। এবার এই বিষয় দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট দিলেন শিক্ষক ও লেখক দেব দুলাল গুহ।
ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তিরা হেরে গেলে হেরে যায় দেশ, ডুকরে কেঁদে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, কষ্টার্জিত বাংলাদেশের ভবিষ্যতের ললাটে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয় শঙ্কার কালো মেঘ।
কেমন সমাজে বাস করছি আমরা? যে সমাজে শিক্ষক ছাত্রকে বকাঝকা করতে পারবে না, ভুল শুধরে দিতে পারবে না? যে সমাজে পরীক্ষার খাতায় নকল করে লেখাকে শিক্ষার্থীরা অধিকার বলেই ধরে নেয়, শিক্ষক কিছু বললেই তাকে হেনস্থা করা হয়? দেখাদেখি করতে নিষেধ করলে নির্লজ্জের মতো ছাত্রছাত্রীগুলো দাঁত কেলিয়ে অনুনয়ের সুরে বলে, ‘স্যার, কিছুই পড়ি নাই, পুরোটা তো দেখছি, এই এক লাইনে ফিনিশিংটা দেখে লিখতে দেন!’ ব্যবহারিকে ভালো নম্বর না দিলে যে সমাজে বাবা-মা পাঠান সুপারিশ! পরীক্ষার আগের রাতে বাবা-মাকেই তো দেখি সন্তানকে প্রশ্ন জোগাড় করে দিতে!
শিক্ষকদেরও কি দোষ একেবারেই নেই? ক্লাস কি ঠিকমতো নেয়া হয়, শেখানো হয় ভালো করে? মফস্বলে আবার ভালো করে শেখাতে গেলেও নাকি আজকাল শিক্ষার্থীরা অভিভাবক নিয়ে এসে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পরিশ্রম করানোর অভিযোগ তোলে! এ কেমন সমাজে বাস করছি আমরা? আমাদের ছেলেবেলার সমাজটা কোথায় গেলো, যখন স্যারের বকা বা বেতের বারি খেয়ে এসে লজ্জায় বাবা-মাকে সে কথা বলতো না সন্তান, আবার বাবা-মায়ের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে? দেখাদেখি করা তো দূরে থাক, ঘাড় ঘুরানো যেত না স্যারদের ভয়ে অথবা কম্পিটিশনের কারণে ভুল বলে দেবে বলে, আজ সবাই এমন মিলেমিশে দুর্নীতি কেন করে?
সবশেষে এই শিক্ষক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,
আসলে ওদেরই বা কি দোষ? বাবা-মাকে দেখেই আজকাল সন্তান দুর্নীতি করা শেখে। দুর্নীতিবাজ বাবা-মা সন্তানকে বকা দিবেন কোন মুখে? আর বাকিরা বাধ্য হয়ে সহপাঠিদের দেখাদেখি বাধ্য হয়ে দুর্নীতি করে। অল্প কিছু শিক্ষার্থীর শেখার আগ্রহ থাকলেও তা পরিবেশের কারণেই মরে যায়। এই সমাজে শিক্ষককে দেখে শিক্ষার্থী শ্রদ্ধাভরে সালাম দেয় না, যদিও কেউ দেয় সেই সালামের ভেতর কোথায় যেন ‘দয়া করে দিলাম’ ভাবটা থেকে যায়!
এমন সমাজে শ্যামল কান্তিদের টিকে থাকা দায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে দেশ গড়তে চাওয়া মানুষগুলো আজ কোণঠাসা। এভাবেই চলছে সমাজ! কতদিন চললে পরে আমাদের টনক নড়বে?