লোক গানের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য না ফেরার দেশে চলে গেছেন আজ মঙ্গলবার। গুণী এই শিল্পীর অকালপ্রয়াণ শোকাবহ পরিবেশ তৈরি করেছে বাংলা সংগীতাঙ্গনে। তার এই চলে যাওয়া বাংলাদেশের সংগীতভুবনেও ফেলেছে শোকের গভীর ছায়া। সংগীতের মানুষেরা শোকের সেই টুকরো অনুভুতি ব্যক্ত করেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
কী হলো কালিকা! কোথায় চলে গেলে! কত কাজ বাকী। কত পরিকল্পনা কত স্বপ্ন। দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র, নাটক নির্মাণ। এই তো ১ মার্চে ঢাকায় আরেফীনের মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘ভুবন মাঝি’র প্রিমিয়ার শো’র পরে মধ্যরাত অবধি স্বপ্নের পুনর্বুনন। মার্চে আবার ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি। কী হবে এসবের কালিকা! বাংলা সংগীতের ঐতিহ্য ও ইতিহাস নিয়ে তোমার জ্ঞান ও চর্চা বিস্ময় জাগানিয়া। মাঝে মাঝে প্রয়াত নাট্যার্চায্য সেলিম আল দীনের কথা স্মরণে আসতো। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে তোমার বিশ্বাস ও ভালবাসা আমাদের সাহস যুগিয়েছে। কী জানি কী হবে এখন। কিছুই ভাবতে পারছিনা।
তপন চৌধুরী
যে কজন শিল্পী সাধারণ মানুষের মধ্যে লোকগান প্রিয় করে তুলেছিলেন, তাদের মধ্যে কালিকাপ্রসাদ অন্যতম। বয়স তার বেশি হয়নি, কিন্তু তার গুণের পাল্লা ভারী হয়ে গিয়েছিল এই বয়সেই। লোকগানে ন্যাচারাল ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে সেগুলো জনপ্রিয় করে তুলতে তার চেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। এমন মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায়, কখনোই না।
বারী সিদ্দিকী
আমি তার অনেক গান শুনেছি। কী দরদ দিয়ে সে গান করতো। আহারে, চলে গেলেন তিনি। এই শিল্পী শুধু গান গেয়েই ক্ষান্ত হননি, লোকগানকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় ভাবে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়, এমন চিন্তায় বিভোর ছিলেন। তার অনেক কাজ বাকি রয়ে গেল। এমন তিনি যেমন চাননি আর আমরা তো তার চলে যাওয়ার কষ্টে বিভোর। ভাল থাকুন আপনি কালিকাপ্রসাদ।
মমতাজ বেগম
কালিকাপ্রসাদ বড় মাপের শিল্পী ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই ঘরানার গানের সংগ্রাহকও। তার অনেক গান আমি শুনেছি। যেগুলো মন ছুঁয়ে যায়। এমন একজন শিল্পীর অকালপ্রয়াণ মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। কালিকাদা যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন।
শুভ্রদেব
সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে কালিপ্রসাদের মৃত্যুর খবর জানতে পেরে মনটা অস্থির হয়ে আছে। গানপাগল ছিলেন মানুষটি। আমার সঙ্গে কলকাতায় কয়েকবার দেখা হয়েছে। আলাপ হয়েছে গান নিয়ে। আমি আধুনিক গানের শিল্পী হয়েও আমার সঙ্গে লোকগান কীভাবে দুই বাংলাতে আরও জনপ্রিয় করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ করেছিলেন। শুধু গান নয়, গানের যে বাদ্যযন্ত্র সেগুলো নিয়েও ছিল তার অগাধ জ্ঞান। তিনি নিজে কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছেন। যেগুলো তার গানে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করে থাকেন। এমন একজন গানপাগল মানুষের অকালপ্রয়াণ কীভাবে মেনে নেই?
ফাহমিদা নবী
কালিকাপ্রসাদ নেই, খবরটা শুনে বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ব্যাথা আর নিতে পারছি না। বিশেষ করে তার মতো শিল্পীর চলে যাওয়া তো নয়ই। বেশ কিছুদিন আগে ভারতের দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সেসময় তিনি বাংলা গানের সুর নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। রাধারমণের গান, ধামাল গানসহ লোকগানের আরও কয়েকটি শাখা নিয়ে তিনি কথা বলেছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম তার সেই কথা। বাংলা গান নিয়ে তার অগাধ জ্ঞান। কাছ থেকে তাকে যতটুকু দেখেছি তাতে মানুষ হিসেবে তাকে অনেক বড় মনে হয়েছে। এই ক্ষণজন্মা শিল্পীর জন্য শ্রদ্ধা রইল।
আসিফ
আমাদের মধ্যে মৌলিক শিল্পী খুব। কালিকাদা ছিলেন এমনই একটি মৌলিক শিল্পী, শুধু কলকাতার শিল্পী নন বরং সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে প্রিয় শিল্পী। তার গান আমি খুব পছন্দ করতাম। সময় পেলেই তার গান শুনতাম। তিনি আজ নেই। এটা কীভাবে সম্ভব? কালিকাদা এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে কেন?
অবসকিওর, ব্যান্ড
অবসকিওর পরিবার আজ মর্মাহত। কালিকাদা চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। সংগীত ভূবনে কালিকাদার মতন জাতশিল্পীর দেখা পাওয়া এক সৌভাগ্যের নাম। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। দোহার ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনা। কালিকাদা আমরা সকলে আপনার কাছে ঋণী হয়ে থাকবো আজীবন।