দেশের জার্সি গায়ে মেসি নিবেদিত নন! তিনি যতটা না আর্জেন্টিনার তার চেয়েও বেশি বার্সেলোনার! স্বয়ং ম্যারাডোনাই তো অভিযোগ করেছিলেন: মেসি নেতৃত্ব দিতে অক্ষম। রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরুর দুই ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র এবং ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারে সমালোচনার পালেও লাগছিল হাওয়া। কিন্তু তিনি যে মেসি, লিওনেল মেসি; প্রমাণ রাখতে আবারও ঈশ্বরের আশীর্বাদের ডান পা নিয়ে হাজির সেন্ট পিটার্সবার্গে।
প্রায় মাঝ মাঠ থেকে এভার বানেগার বাড়ানো বল বাঁ-পায়ের উরুর বাইরের অংশে আলতো আঁচড়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথমে পায়ের পাতায়, পরের পদক্ষেপে ডান পায়ের দুর্দান্ত শটে নাইজেরিয়ার জালে বল। ডু-অর-ডাই ম্যাচে শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যে দলকে নিজে গোল করে এগিয়ে দিলেন… আর কি চাই? পুরোটা সময় জুড়েই বিশ্ব দেখল মেসি ম্যাজিক। খেললেন, খেলালেনও।
মেসির ওপর প্রত্যাশার চাপটা আগে থেকেই। ম্যারাডোনা উত্তরযুগে ওর্তেগা, বাতিস্তুতা, আয়ালা যারাই এসেছেন বিশ্বমঞ্চে তাদের ওপরই চাপ ছিল বিশ্বকাপ জয়ের। ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি মেসি জাতীয় দলে আসার পর থেকে চার কোটি আর্জেন্টাইনের সেই প্রত্যাশা বেড়েছে আরও বহুগুণে। মেসিবাহিনীর বিশ্বকাপ মিশন মানেই আলবিসেলেস্তেদের জন্য আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। কথিত আছে, এতো এতো প্রত্যাশার চাপ সামলাতে না পেরেই বারবার হোঁচট খাচ্ছেন মেসি-মাশ্চেরানোরা।
তবে নাইজিরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে আর্জেন্টিনার এ ফুটবল জাদুকরের জন্য পরিস্থিতিটা ছিল আরও কঠিন। একদিকে বিশ্বমঞ্চে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর দুর্দান্ত পারফরমেন্স অন্যদিকে নিষ্প্রভ মেসি। সমালোচনার তীর ছুটছিল চারদিক থেকেই।
এর মাঝে চাউর সাম্পাওলির সঙ্গে জমছে না মেসিদের রসায়ন। খেলোয়াড়রা চাইছিলেন নাইজেরিয়া ম্যাচের আগেই যেন বিদায় করা হয় সাম্পাওলিকে। তার দূরহ ছকে মানিয়ে উঠতে পারছেন না ফুটবলাররা। আগুয়েরোর বক্তব্যে সেটা স্পষ্টও হয়ে উঠেছিল অনেকাংশে।
তবে, শেষ পর্যন্ত ফুটবলেই জয়। মেসি ম্যাজিকে আবারও উদ্ধার আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বে বিদায়ের লজ্জা এড়িয়ে শেষ ষোলোয় আলবিসেলেস্তেরা। গোলের পর দৌঁড়ে এসে সাম্পাওলিকে জড়িয়ে ধরাটাও স্বস্তি দিয়েছে আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্তদের। আবারও প্রমাণ করলেন কেনো তিনি বিশ্বসেরা।