টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার আসামি সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টায় কঠোর নিরাপত্তায় কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে টাঙ্গাইল আদালতে আনা হয়।
গত নভেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানি আটবার পিছিয়েছে। প্রতিবারই অসুস্থতার কারণে। তাই সম্প্রতি আমানুরকে বিচারিক আদালতে হাজির করার আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মামলার তারিখে আমানুরকে আদালতে হাজির করা হয় না জানিয়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ আসে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এস আকবর খান বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে ছয় মাসের মধ্যে এ মামলার বিচারকাজ নিষ্পত্তি করার জন্য। কিন্তু ছয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আসামি আমানুরকে হাজির না করায় বিচারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা আদালতকে জানান, পাইলসের রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় আমানুর ভ্রমণ-উপযোগী নন বলে কারাগারের সহকারী সার্জন জানিয়েছেন। তাই তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগের তারিখ ১২ জুন জানানো হয়, জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানা, কোমর ব্যথা ও হৃদরোগের ব্যথার কারণে আমানুর ভ্রমণ-উপযোগী নন। গত বছরের ৯ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির প্রথম তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু এর আগের দিন কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে বুকে ব্যথাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। তাই তাকে ওই তারিখে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।
‘উচ্চ রক্তচাপ, বুক ও কোমরের ব্যথার কারণে আমানুর গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি প্রায় তিন মাস ঢাকা মেডিকেলের কেবিনে ছিলেন। এরপর তাকে আবার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় অভিযোগ গঠনের শুনানি তিনবার পেছায়।’
মামলার বাদী ও নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ অভিযোগ করেন, আমানুর প্রভাব খাটিয়ে কখনও হাসপাতাল, কখনও কারাগারের চিকিৎসাকেন্দ্রে থেকে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ টাঙ্গাইলে তার কলেজপাড়া এলাকায় বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
প্রথমে থানা-পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত করে। ২০১৪ সালের আগস্টে এ মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন। আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিতে সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তার তিন ভাইয়ের এ হত্যাকান্ডের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।
এরপর আমানুর ও তার ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুর ও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।