সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি মাইল ফলক দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের অধীন সর্বাধিক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে এবারের নির্বাচন। দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল বড় একটি প্রত্যাশা। তারপরই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ না থাকলে ভোটাররা অবাধে নিশ্চিন্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। সে কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে অপরিসীম।
সেই লক্ষ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার বৈঠক হয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপিসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এ বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও স্থানীয় পর্যায়ের পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
এবার ৩০০ আসনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনে সাধারণ এলাকার ভোটকেন্দ্রের পাহারায় একজন পুলিশসহ ১৪ জন সদস্য, মেট্রোপলিটন এলাকার ভোটকেন্দ্রে তিন জন পুলিশসহ ১৫ জন এবং দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার ভোটকেন্দ্রে দুইজন পুলিশসহ ১৪ জন সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন। মোট ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে। এবার ভোটের জন্য বরাদ্দ ৭০০ কোটি টাকার সিংহভাগই যাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। এসব বাহিনী ৩০০ সংসদীয় আসনের ৪০ হাজার ১৮০টি কেন্দ্র পাহারা এবং ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন ভোটারের নির্বিঘ্নে ভোটদানে সহায়তা দিতে কাজ করবে।
নির্বাচনে সহিংসতা কম বেশি হয়ে থাকে, একশতভাগ অহিংস নির্বাচনের অলীক বিষয়। তবু আমরা চাইবো যেন নির্বাচনী পরিবেশ অহিংস থাকুক। পরিস্থিতির সুযোগ সন্ধানীরা যেন কোনভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস না পায় সে ব্যাপারে শতভাগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। এরইমধ্যে নির্বাচনে স্ট্রাইকং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, জনগণকে অবাধে নির্বিঘ্নে ভোটধিকার প্রয়োগের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাহসী স্বচ্ছ পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।