সাবেক দুই কোচ আলেজান্দ্রো সাবেলা ও হোসে পেকারম্যানের নাম বাতাসে ভাসছে জোরেশোরেই। কেউ নিশ্চিত নন অবশ্য। এ দুজনের পাশেই আছে আরও চার কোচের নাম। হোর্হে সাম্পাওলির ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিয়ে ২০২২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে সাফল্য এনে দেবেন কে, কার সঙ্গে ঘটবে মেসিদের মনের মিল, কে হবেন নতুন কাণ্ডারি, সেটাই এখন আর্জেন্টিনায় কোটি টাকার প্রশ্ন!
অথচ ১২ মাস আগেও পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেক ঘাম ঝরিয়ে সেভিয়া থেকে সাম্পাওলিকে ছাড়িয়ে এনে মেসিদের কোচ বানিয়ে দেন দেশটির ফেডারেশন সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ে। তখন ঘোষণা করেছিলেন, ‘বিশ্বের সেরা কোচের হাতেই আর্জেন্টিনাকে তুলে দিলাম।’
সেই সাম্পাওলির আমলে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায়। কোয়ার্টারে উঠতে ব্যর্থ আলবিসেলেস্তে ফেডারেশনের কপালে ভাঁজ তখন থেকেই। সাম্পাওলি ইতিমধ্যে অতীত। নতুন কাকে আনা যায় চলছে বাছাই। নতুন কোচের আমলে সব ঠিকঠাক চলবে তো! অসংখ্য এমন প্রশ্ন মাথায় রেখে সম্ভাব্য ৬ কোচকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রেখেছে এএফএ।
সেই ছয়জন কেমন, মেসিদের কোচ হওয়ার জন্য কতটা ভারী জীবনবৃত্তান্ত আছে তাদের, সেটাই দেখে নেয়া যাক-
আলেজান্দ্রও সাবেলা
আর্জেন্টাইন ভক্তদের ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই তার নাম। মনমত খেলোয়াড় না পেয়েও নিজের অভিজ্ঞতা ও ট্যাকটিস কাজে লাগিয়ে ১৯৯০ সালের পর প্রথমবার ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিলেন। রক্ষণ নিয়ে যে চিরন্তন দুশ্চিন্তা আর্জেন্টিনার, সেটিও অনেকখানি কমে গিয়েছিল সাবেলার বুদ্ধিদীপ্ত কোচিংয়ের সময়েই।
চারবছর আগের সেই বিশ্বকাপের পর সাবেলা এখনও আর্জেন্টাইনদের নায়ক। ব্রাজিলের আসর শেষে অসুস্থ থাকায় দায়িত্ব নেননি আর কোনো দলেরই। কিছুদিন আগে ঘোষণা দিয়েছেন আবারও ফুটবলে ফিরতে প্রস্তুত।
স্বল্প সম্পদকে দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারেন সাবেলা। পারেন ভুল থেকে শিক্ষা নিতেও। মেসিদের একসুতোয় গাঁথতে প্রচুর উজ্জীবনী মন্ত্রও আছে তার মগজে! সবচেয়ে বড় কথা, ফেডারেশন কর্তা থেকে শুরু করে খেলোয়াড়; সবার কাছেই দারুণ শ্রদ্ধারপাত্র সাবেলা। সাম্পাওলির আমলে দলে যে গৃহযুদ্ধের আভাস মিলেছিল, সাবেলার অধীনে তা থেকে দূরে থাকা যাবে বলেই বিশ্বাস ফুটবল বোদ্ধাদের।
হোসে পেকারম্যান
পেকারম্যানকেও নিশ্চয়ই ভুলে যাননি আর্জেন্টাইনরা। তারুণ্যে ঝলমল মেসিকে ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রেখে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন এ আর্জেন্টাইন কোচ। সেই সমালোচনা এখনও আলোচনার খোরাক জোগায়। আবার এটিও ভুলে গেলে চলবে না ২০০৫ ও ২০০৭ সালে মেসি, আগুয়েরো, ডি মারিয়া ও রোমেরোদের নিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছিল যে আর্জেন্টিনা দলগুলো ছিল, তা পেকারম্যানের মস্তিষ্কপ্রসুত ও দেখিয়ে দেয়া কৌশলেরই ফল।
২০০৬ সালের সেই ব্যর্থতার পর পেকারম্যান দমে যাননি। বরং কলম্বিয়ার দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বকাপেই পেয়েছেন সাফল্য। ৬৮ বছর বয়সেও দেখিয়ে দিয়েছেন ফুটবলকে দেয়ার আছে তার অনেককিছুই।
নিজ থেকেই ঘোষণা দিয়েছেন সাউথ আমেরিকার বাইরে আর কোনো দলের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নন পেকারম্যান। তাই এএফএও বুক বেঁধেছে আবারও যদি ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরানো যায় সেই আশায়।
রিকার্ডো গারেকা
দেখতে ’৭০ দশকের হিপ্পি, পপ তারকার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু অ্যাটাকিং ফুটবলকে মূলমন্ত্র মানা গারেকা হয়ে উঠেছেন মেসিদের কোচের তালিকায় থাকা অন্যতম মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।
১৯৮২ সালে পেরুর প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলে, তখন অন্যতম নায়ক ছিলেন গারেকা। ২০১৮ বিশ্বকাপে তরুণ এক দল নিয়ে রাশিয়ায় এসে এএফএ সভাপতি তাপিয়ের নজর কেড়েছেন পেরুর এ কোচ। নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার মতো একজোড়া জহুরির চোখ আছে গারেকার। পেরুর হয়ে তিনবছর দায়িত্ব পালন করে রেনাতো তাপিয়ে, ক্রিস্টিয়ান কুয়েভা, এডিসন ফ্লোরেসের মতো একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করেছেন গারেকা।
আর্জেন্টিনার হয়ে এমন একঝাঁক ভবিষ্যতের তারকা খুঁজে বের করবেন তিনি, সেই আশাতেই এএফএর তালিকায় আছেন গারেকা।
মাতিয়াস আলমেয়াদা
আগের তিন কোচের সবারই বয়স ষাটের বেশি। আলমেয়াদা হতে পারেন আর্জেন্টিনার জন্য অপেক্ষাকৃত তরুণ কোচের অপশন। রিভার প্লেট ও মেক্সিকান ক্লাব চিভাসের হয়ে কোচের দায়িত্ব পালন করা আলমেয়াদা নিজেও আগ্রহী মেসিদের কোচের উত্তপ্ত চেয়ারটাতে বসতে।
ক্লাব ফুটবলে আলমেয়াদার সবচেয়ে বড় অবদান রিভার প্লেটকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে আবারও প্রথম বিভাগে তুলে আনা। সেটা আবার দায়িত্বের প্রথম মৌসুমেই। চিভাসকে ২০১৮ ক্যানকাফ অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নও করেছেন তিনি। বড় কোনো দলের দায়িত্ব নিতে চান বলে আপাতত স্বেচ্ছা-বেকার আছেন। সেই দলটা কী তবে আর্জেন্টিনা?
মার্সেলো গ্যালার্ডো
তরুণ, প্রতিযোগী মনোভাব, সাহসী ও দারুণ সাফল্যমণ্ডিত। মার্সেলো গ্যালার্ডোর নামের পাশে এসব উপমা যোগ করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম। বলা হচ্ছে, মেসিদের কোচের পদে বসতে তার চেয়ে সবদিক থেকে উপযোগী প্রতিদ্বন্দ্বী খুব কমই আছে আর্জেন্টিনায়। আলমেয়াদার চেয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ ৪২ বছর বয়সী গ্যালার্ডো প্রশংসিত তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্যের জন্যও।
গ্যালার্ডো চার বছর ধরে আছেন রিভার প্লেটের কোচ হয়ে। এই চার বছরে কোপা সৌদামেরিকানা ও কোপা লিবার্তোদোরেসের মতো আটটি শিরোপা জিতিয়েছেন ক্লাবটিকে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুন করে দল গোছাতে চাওয়া আর্জেন্টিনা দীর্ঘমেয়াদি বিবেচনায় গ্যালার্ডোকেই আগ্রহের কেন্দ্রে রাখছে।
কারণ হিসেবে লেখা হচ্ছে, গ্যালার্ডো লাতিন আমেরিকার একমাত্র কোচ যিনি খেলোয়াড়দের ভিজ্যুয়ালাইজেশন টেকনিক ব্যবহার করেন। বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল প্রয়োগ করে খেলোয়াড়দের মনঃসংযোগ সৃষ্টির খ্যাতিও আছে তার।
হোর্হে আলমিরন
আলমিরনের শক্তির বড় জায়গাটা হল, তার বিশাল ক্ষমতাবান সব শুভাকাঙ্ক্ষী দল আছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও ম্যাক্রির মতো ক্ষমতাবানও আছেন আলমিরনের গুণমুগ্ধ বন্ধুর তালিকায়।
অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনালের এই তরুণ কোচের বেশ খ্যাতি আছে উরুগুয়েতে। গ্র্যামিওর কাছে কোপা লিবার্তোদোরেসের ফাইনালে ন্যাসিওনাল হারলেও বেশ প্রশংসা হয়েছে আলমিরনের ট্যাকটিস নিয়ে। স্বল্প প্রতিভায় আক্রমণাত্মক দল গঠনের বেশ সুনাম আছে তার।