ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আমরা ঘটনা শুনেছিলাম। তবে ঘটনাটা এত বর্বর ও পৈশাচিক; সেটা বুঝতে পারিনি।
রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে হামলায় আহত ডাকসু ভিপিকে দেখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তার আগে সেখানে ঢুকতে বাধার মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। সে সময় তাদের সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও একই পরিস্থিতির শিকার হন।
নুরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমরা ঘটনা শুনেছি। তবে ঘটনাটা এত বর্বর ও পৈশাচিক; সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। ঘটনা যে ঘটেছে শুধু সেটাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরণের উচ্ছৃঙ্খলতা, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করা এই সরকার মানবে না। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো বিষয় না। দুষ্কৃতকারীরা, কোন জায়গার নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেটা দেখা হবে।’
নানক বলেন, আমরা বলতে চাই, যে মঞ্চের নামেই গোলযোগ করা হোক না কেন কাউকে বর্তমান সরকার রেহাই দিবে না। শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
নুরের সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হাসপাতাল এখানে অনেক জরুরি রোগী রয়েছে। এখানে যারা স্লোগান দিচ্ছেন তাদেরও কু-মতলব রয়েছে। তাদের কু-মতলব সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, যারা এখানে আমাদেরকে ভারতের দালাল’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন এরা কি চায়, এদের উদ্দেশ্য কি, এগুলো আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যাতে গোলযোগ সৃষ্টি করে পবিত্র শিক্ষাঙ্গনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেউ অশান্ত করতে না পারে।’’
ডাকসু’র ভিপির উপর হামলায় রাবিতে মশাল মিছিল
ডাকসু কার্যালয়ে ভিপি নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রোববার ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও রাকসু আন্দোলন মঞ্চের নেতাকর্মীরা যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধিজীবী চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিজয়ের এ মাসে মুক্তিযুদ্ধমঞ্চ নামের একটি সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনাকে ক্ষুন্ন করছে। ডাকসুর কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, এর আগে ভিপি নূরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর ৮ বার হামলা করা হয়েছে কিন্তু কাউকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাযহারুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য দেন, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মুর্শেদুল আলম।
এর আগে রোববার দুপুর পৌনে ১টায় ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এবং ছাত্রলীগের যৌথ হামলা চালায়।প্রায় আধঘণ্টা চলে মারপিট। এতে ভিপি নুরসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
হামলার প্রায় এক ঘণ্টা পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করেন। পরে চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।