এ কেমন ধৃষ্টতা? মুক্তিযুদ্ধের দুই বীরশ্রেষ্ঠের প্রতি কেন এমন অশ্রদ্ধা, অপমান আর অবহেলা? গেরিলা ১৯৭১ নামে একটি সংগঠনের ফেসবুক পেজে সোমবার চারটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিগুলো আগের দিন পহেলা বৈশাখে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল থেকে তোলো। তাতে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে দুই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান এবং শহীদ হামিদুর রহমানের কবরের উপরে দাঁড়িয়ে খেলা করছে শিশুরা।
এই অশ্রদ্ধায় বড়রা আরো এগিয়ে। একজন স্যান্ডেল পায়ে শহীদ মতিউর রহমানের কবরে তার নামফলকের ঠিক সামনেই বসে আছেন। তার আশেপাশে থাকা অন্যদেরও দেখা যাচ্ছে স্যান্ডেল-জুতা পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আবার দুই বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিসৌধের মাঝেই উঠে পড়েছেন।
ছবিগুলো পোস্ট করে গেরিলা ১৯৭১ পেজে লেখা হয়েছে, ‘‘পরিমিতিবোধ হারানো, ইতিহাস বিস্মৃত ও সর্বসংহারি বিকৃত আচরণের ক্ষেত্রে আমাদের তুলনা সম্ভবত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। নতুন বর্ষকে বরণ করতে গিয়ে আমাদের অবিশ্বাস্য অশ্রদ্ধা ও অসম্মানের কবল থেকে বাঁচেনি সমাধি প্রাঙ্গণ।
তাহলে গোরস্থানও আমাদের উৎসবস্থলে পরিণত হয়েছে। কোন ভাষায় ধিক্কার জানাবো? কাদের ধিক্কার দেব? মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল, বাংলাদেশের একমাত্র সমাধি প্রাঙ্গণ যেখানে মুখোমুখি দুই সমাধিতে শুয়ে আছেন দুই বীরশ্রেষ্ঠ, শহীদ মতিউর রহমান এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমান। গতকাল তাঁদের সমাধি প্রাঙ্গণে তাঁদের সমাধির ওপর দাঁড়িয়ে-মারিয়ে বিকৃত আনন্দে মেতে উঠেছিল একপাল অমানুষ।’’
অন্য দিনগুলোতে সেখানে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন থাকার কথা উল্লেখ করে আরো বলা হয়, ‘‘গতকাল তাঁরা কোথায় ছিলেন? সমাধি প্রাঙ্গনের ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা রক্ষার কোনো চিহ্ন কোথাও ছিলো না গতকাল। সমাধির ওপর আনন্দে মেতে ওঠা এরা কি বাঙালি? এরা কি মুসলমান? এঁদের বিবেক কি আদৌ আছে?
রাষ্ট্র কি এই অমানুষগুলোকে সাজা দেবে? স্থাপন করবে অন্তত একটি নজির যেন আগামীতে এমন জঘন্য কাজ করা থেকে বিরত থাকে অগণিত অমানুষ? আফসোস, আমাদের জন্যই এই মানুষগুলো নিজ প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন! আফসোস, অধঃপতনের চূড়ান্ত সোপানে দাঁড়িয়েও আমরা সবাই নির্বিকার।’’
আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর পর জাতির এই দুই বীর সন্তানের দেহাবশেষ পাকিস্তান এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তারপর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাদেরকে সমাহিত করা হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেই শহীদের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা-অবহেলা কেন?
এই দৃশ্য দেখে আমরা লজ্জিত, স্তম্ভিত ও ব্যথিত। এ দেখে যে কোনো স্বাভাবিক মানুষকেই স্তব্ধ করে দেবে। এ কোনো দেশে আছি আমরা? এ কেমন চেতনা? আমরা কি একেবারেই পচে গেছি? এতোটাই অধঃপতন আমাদের?
বিকৃত এই মানুষদের প্রতি ধিক্কার আর ঘৃণা জানানোর ভাষাও আমাদের নেই। আমরা চাই অবিলম্বে এই বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। আমরা মনে করি, যে কোনো শহীদের প্রতি অশ্রদ্ধা, রাষ্ট্রদ্রোহিতারই সামিল। কোনোভাবেই তা সহ্য করা উচিত নয়।