চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এতো দ্রুত হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ আমি নই: তাসকিন রহমান

এই মুহূর্তে সবচেয়ে ব্যস্ততম অভিনেতাদের একজন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত তাসকিন রহমান। তার হাতে রয়েছে ৭টি ছবি…

চোখে নতুন স্বপ্ন, বুকভরা আশা আর অভিনয়ে অন্ত প্রাণ! উদ্দেশ্যে একটাই, বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির এই ক্লান্তিলগ্নে নিজের সেরাটা পাশে থাকা। যেন মানুষ আবারও হলমুখি হয়। চাঙ্গা হয় চলচ্চিত্র। আর এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ার চাকচিক্য ছেড়ে ঢাকার সিনেমা পাড়ায়!

বলছি এই সময়ের দর্শকপ্রিয় অভিনেতা তাসকিন রহমানের কথা। নতুন ছবি মানেই এখন তার নাম! গেল কয়েকমাস যতগুলো ছবির ঘোষণা ও শুটিং শুরুর খবর এসেছে, প্রায় সবগুলোতেই থাকছে এই নামটি! বর্তমানে তাসকিন শুটিং করছেন সৈকত নাসির পরিচালিত ছবি ‘ক্যাসিনো’র। শুটিং সেটে বসেই তিনি বর্তমান হালচাল নিয়ে আলাপ করলেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…

নতুন ছবি মানেই তাসকিন!
পরিচালক, প্রযোজক আমাকে নিয়ে ভাবছেন বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে। নিশ্চয়ই আমি ওইসব চরিত্রগুলো প্লে করতে পারবো, এমন ভাবনা থেকেই সবাই আমাকে তাদের সিনেমায় কাস্ট করছেন। সবকিছু মিলে যাচ্ছে বলে আমিও কাজ করছি। এটা আমার জন্য সত্যই আশীর্বাদ।

আপনার হাতে এই মুহূর্তে কতোগুলো ছবি?
এই মুহূর্তে মোট সাতটি ছবি আমার হাতে রয়েছে। সবগুলো ছবিই চুক্তি করা। সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’, এম রাহিমের ‘শান’, দীপঙ্কর দীপনের ‘ঢাকা ২০৪০’, অপারেশন সুন্দরবন’, সৌরভ কুন্ডু’র ‘গিরগিটি’, ফয়সাল আহমেদে’র ‘মিশন এক্সট্রিম’ ও সাইফ চন্দনের ‘ওস্তাদ’।

কোনটার টেস্ট কেমন, পাঠকদের উদ্দেশ্যে যদি বলেন?
প্রতিটি ছবিতে একটা থেকে অন্য চরিত্রে যেতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছি যেটা আমি সবসময় চেয়েছি। ছবিগুলো হাতে নেওয়ার কারণ, ম্যাক্সিমাম ছবির গল্প ও নির্মাতা ভালো। আমার মনে হয়েছে, এমন জনরার ছবি এ মুহূর্তে প্রচুর দরকার। বেশি কিছু আগেই প্রকাশ করতে পারবো না। ছোট করে বলছি, ‘শান’-এ এন্টি হিরো (ভিলেন)। তবে হিরো’র সঙ্গে একেবারে প্যারালাল চরিত্রে কাজ করছি। ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এ আমার চরিত্র একেবারে ‘র’, নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে। ‘ঢাকা ২০৪০’-তে আমি ইতিবাচক চরিত্রে কাজ করছি, হিরোই বলা চলে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নুসরাত ইমরোজ তিশার সঙ্গে আমি ‘গিরগিটি’ ছবিটি করার কথা। এই ছবির গল্প আমার ভীষণ পছন্দের। আমিই লিড চরিত্রে, দ্বৈতভাবে কাজ করবো। ‘ওস্তাদ’-ছবিটিতেও আমার চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। আর যে ছবিটির কাজ বর্তমানে করছি, মানে ‘ক্যাসিনো’র গল্পও দুর্দান্ত।তিনদিন শুটিং করেই বুঝেছি এভাবেই পুরো কাজটা শেষ করতে পারলে ‘ক্যাসিনো’ ঠিক দাবার কোটে ঘোড়ার আড়াই চালের মতো অনেককিছু টপকে সামনে চলে আসবে।

অস্ট্রেলিয়ায় এতো ভালো চাকরি, চাকচিক্য, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফেলে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হলেন?
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল গভর্নমেন্টের সঙ্গে ইনভেশটিগেশন ডিপার্টেমেন্টে আমার কাজ। ফুলটাইম কাজ করতাম। ফুলটাইম যারা ওখানে কাজ করে তাদের একমাসের বেশি ছুটি দেয় না। যেহেতু আমি এখানে আছি তাই, কর্তৃপক্ষ আমাকে চুক্তিতে দিয়েছে। এখন আমি যতদিন ইচ্ছে বাংলাদেশে থাকতে পারবো। অস্ট্রেলিয়াতে গেলে আবার চুক্তিতে কাজ করতে পারবো। ক্লিয়ার করে বলছি, চাকরিটা আমি ছাড়িনি বা যায়নি। আগামী বছর মার্চে আমার হাতে থাকা ছবিগুলো শেষ হবে। যদি এরমধ্যে সেই মানের কোনো ছবি না আসে তবে মার্চের শেষে অস্ট্রেলিয়াতে যেতে হবে। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে আমি বাংলাদেশে কাজ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, মানুষ এখনও সিনেমা দেখতে চাচ্ছে। তবে তারা ভালো সিনেমা চাচ্ছে। এখন আমাদের উচিত তাদের ভালো মানের ছবি উপহার দেওয়া।

অস্ট্রেলিয়ার দিনগুলো মিস করেন?
এখানে এতো ব্যস্ত যে সেভাবে ভাবার সময় হয়না। তবে মাঝেমধ্যে দিনগুলো খুব নাড়া দেয়। আমি বাংলাদেশে এখনও স্থায়ী না, অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ী। এখানে আমার বাসা, পরিবার আছে। কিন্তু ১৮-২০ বছর ধরে কাজ করে যা অর্জন করেছি সবকিছুই অস্ট্রেলিয়াতে। সেজন্য অস্ট্রেলিয়া আমি হঠাৎ করে ছাড়তে পারবো না। আমাকে সেখানে যেতেই হবে। চলচ্চিত্রের ক্রান্তিকালে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারছি এটা অনেক বড় ব্যাপার। শিল্পীদের ডি-মোটিভেট করা মানুষের অভাব নেই। ইন্ডাস্ট্রির এমনও মানুষ আমাকে বলেছে, হবে না। সবকিছু বাদ দেন। আবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যান। কিন্তু আমি কালচার ভালোবাসি। এতো দ্রুত হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ আমি নই। অস্ট্রেলিয়ার এতোকিছু ছেড়ে আমি এখানে এসে যদি কিছু করতে না পারি তবে ব্যর্থতা নিয়ে ফিরতে হবে। আমি তা চাইনা। নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। ভালো ভালো ছবি আবার বানানো শুরু হচ্ছে। সেখানে মাল্টি কাস্টিং এর কাজগুলোতে আমিও আছি। এখন যে কনট্রিবিউশন করছি এর মাধ্যমে আবার নতুন কিছু আসছে।

ছবি: জাকির সবুজ

‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবি দিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলেন। ওই ছবির জন্য ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ আপনি পেলেন না, আরেকজন পেলেন। খারাপ লেগেছে?
‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ বা যে কোনো অ্যাওয়ার্ড আমার কাছে ‘সিম্বল অব অ্যাপ্রিসিয়েশন’। এটা অর্জনের জন্য যে প্রতিভা এবং যোগ্যতার প্রয়োজন তা এখনও অর্জন করতে পারিনি! যে বা যারা পেয়েছেন, তারা আমার কাছে উৎসাহ। কেন পেলাম না এটা ভাবলে কাজে মনোযোগ কমে যাবে। দর্শকদের জন্য কাজ করি। তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন এসেছে আমি কেন পেলাম না! এটাই আমার কাছে অনেক বড় অর্জন। কারণ, আমি যাদের জন্য কাজ করেছি তারাই আমার জন্যই চিন্তা করছেন, প্রশ্ন তুলছেন। দর্শক যেহেতু ভেবেছেন, যারা ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ জুরি বোর্ডে থাকেন তাদেরও বিষয়টি ভাবা উচিত।