শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত কয়েকদিন ধরে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন ও ফিটনেস সনদ নিতে মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ কার্যালয়ে। ক্রমাগত বাড়তে থাকা ভিড় সামলাতে এরইমধ্যে অফিসের কাজের সময়ও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য এখন থেকে শুক্রবার ছাড়া সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বিআরটিএ’র কার্যালয়।
এ কারণে তাদের কাজ বাড়লেও কমেনি দালালদের দৌরাত্ম্য। মঙ্গলবার চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনেও দেখা গেছে বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয়ের বাইরে প্রকাশ্যেই দালালদের সঙ্গে চলছে অর্থের লেনদেন। এখানে দালালদের দৌরাত্ম নতুন নয়, তবে গত কয়েকদিনে তা আরো বেড়ে গেছে। কাজ করাতে এসে দালালদের সাহায্য নেয়া লোকজন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো এবং হয়রানি এড়াতে সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে বাড়তি টাকা দিচ্ছে।
আমরা আগেও এই দালালদের সিন্ডিকেটের কাছে একাধিক মন্ত্রীকেও নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখেছি। তাদের বিরুদ্ধে বহুবার অভিযান চালানো হয়েছে। এমনকি দালালদের কাউকে কাউকে হাতেনাতে ধরার পর কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে আবারো তারা একই কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তারা এটা পেরেছে কারণ কোটি কোটি টাকার এ বাণিজ্যের একটা অংশ অনেক রাঘব-বোয়ালের কাছেও যায়।
দালালদের বেশির ভাগই যখন যে ক্ষমতায় তখন সেই ক্ষমতাসীনদের হয়ে কাজ করে। এ নিয়েও কম কথা হয়নি।
কিন্তু যে দলেরই লোক হোক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা নেই বলেই দালালদের বিরুদ্ধে কেউই পদক্ষেপ নিতে পারে না। বিশেষ করে বিআরটিএ’র কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারিই এসব দালালকে লালন-পালন করে। সেখানে এমন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আছেন; যাদের বদলি করার পরও অর্থের প্রভাব খাটিয়ে তারা আবারো হাজির হন।
এদেশে সড়কে যে অব্যবস্থা, তার বড় কারণ বিআরটিএ’র এসব কর্মকর্তার দুর্নীতি। বাস ভাড়া থেকে শুরু করে গাড়ির রুট পারমিট, ভুয়া লাইসেন্স, পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স, আনফিট গাড়িকে ফিট দেখিয়ে ফিটনেস সনদ দেয়ার মতো ভয়ংকর সব দুর্নীতির সাথে তারা জড়িত।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সেই দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র আরো বড় হয়ে বেরিয়ে পড়েছে। পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণলায়ের গাড়ির ফিটনেস নেই। চালকদের লাইসেন্স নেই। বাসের রুট পারমিট নেই। এমন কত শত অনিয়ম।
আমরা মনে করি, বিআরটিকে দুর্নীতিমুক্ত করে নিয়মের মধ্যে অানা গেলে সড়কের অনেক অব্যবস্থাপনা রোধ করা সম্ভব হবে।