ওয়েব ফিল্ম ‘মাইনকার চিপায়’ নির্মাণ করে রীতিমত হইচই ফেলে দিয়েছেন তরুণ নির্মাতা আবরার আতহার। তার নির্মাণ মুন্সিয়ানায় দুর্দান্ত ডার্ক থ্রিলার দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন দর্শক। আয়মান আসিব স্বাধীনের চিত্রনাট্যে আবরারের এই ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, শ্যামল মাওলা ও শরিফুল রাজ। এটি থেকে দর্শক শুধু বিনোদন নয়, মাদকের মরণ ফাঁদ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। মুক্তির পর ‘মাইনকার চিপায়’ ওয়েব ফিল্মটি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন নির্মাতা আবরার আতহার:
‘মাইনকার চিপায়’ মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ভালোই। তবে দু-একজনের কাছে ভালো লাগেনি। এটা আগে থেকে ধরেই নিয়েছিলাম যে কারও কারও কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। ২০ জন দর্শক দেখলে ২ জনের কাছে ভালো নাই বা লাগতে পারে! তবে সর্বোপরি ভালো সাড়া পাচ্ছি। ব্যাপ্তীতে ধরলে এটা ৪০ মিনিটের কনটেন্ট। ক্রেডিটসহ ৫০ মিনিট। এতো অল্প সময়ে চরিত্রগুলো খুব তাড়াতাড়ি বিল্ডআপ করতে হয়েছে এবং শেষ করতে হয়েছে। কারণ, মানুষ তাদের মূল্যবান ৫০ মিনিট সময় আমার কাজের জন্য ব্যয় করেছে। এ সময়টুকু তাদের বোর লাগে নাই। সেদিক থেকে আমি খুব খুশি।
এর সিক্যুয়াল আসবে?
এটা দর্শকদের রেসপন্সের উপর নির্ভর করছে। আমি তো সিক্যুয়ালের ব্যবস্থা করে রেখেছি। অন্য একটা আইডিয়া করে রেখেছি। প্রযোজক যদি কনভিন্স হন তাহলে অবশ্যই হবে।
দর্শকদের কোন ধরনের মন্তব্য আপনাকে স্পর্শ করছে?
জিনিসটা অনেক এন্টারটেইনিং। দেখতে মজা লেগেছে। মোটেও বোরিং লাগে নাই। নতুনত্ব পেয়েছে। তবে অনেকেই সিনেমার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এটা সিনেমার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। সিনেমা আরও বড় ফরম্যাট। বিশাল ক্যানভাস।
নিশো, শ্যামল, রাজ- এই তিন অভিনেতাকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করা এবং ঠিকঠাক কাজ আদায় করা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
তিনজনই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাদের থেকে কাজ আদায় করা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল না। আমরা শুরু থেকে টার্গেট নিয়েছিলাম যে, মজার কিছু বানাচ্ছি। আমরা দর্শকদের মধ্যে এক্সাইটমেন্ট আনবো। কাজটা ঠিকভাবে করতে তিন অভিনেতাই খুবই সাহায্য করেছেন।
অনেকগুলো রাতের দৃশ্যের সমন্বয় রয়েছে এখানে। ব্যক্তিগতভাবে আপনার সবচেয়ে বেশি পছন্দের দৃশ্য কোনটি?আমি কিন্তু এখানে অনেকজনকে ট্রিবিউট দিয়েছি। মালেক আফসারী, কাজী মারুফ, কাজী হায়াৎ থেকে আরও অনেককে। মানে পপ কালচার ভরিয়ে দিয়েছি। এটাও ভালো লাগার। তবে দৃশ্যের মধ্যে ইটভাটার একটা দৃশ্য রয়েছে। মানিকগঞ্জে শুটিং করা। ওইটা আমার খুব পছন্দের একটা দৃশ্য।
‘মাইনকার চিপায়’ শুরুতে যে গল্প ও স্ক্রিপ্ট ছিল, শুটিংয়ে নাকি বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে?
নিশো ভাই এবং রাজের চরিত্র দুটো একটু বদলানো হয়েছে। গল্পে আরও কিছু বলতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু জি ফাইভ তো ইন্ডিয়ান। তারাও এটা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। গল্পে কিীবলতে গিয়ে কী বলা হয়ে যায়, বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে নেবে! এজন্য অনেক সংলাপে সেন্সর করা এবং মিউট করা হয়েছে।
একটি শর্টফিল্ম (লাইফ ইন আদার ওয়ার্ডস), একটি টেলিফিল্ম (কলি ২.০) ও একটি ওয়েব ফিল্ম (মাইনকার চিপায়) নির্মাণ করেছেন। আপনার কাজের সংখ্যা এতো কম কেন?
কাজ করতে গেলে তো প্রযোজক লাগে। যিনি সাহস দিয়ে বলবেন, ‘আবরার তুমি পারবা। সামনে আগাও। আমি সঙ্গে আছি।’ এমন প্রযোজক পাইনা বলেই হয়তো কাজের সঙ্গে কম। তাছাড়া দুই বছর ধরে ফিল্মের জন্য একটা গল্প নিয়ে কাজ করছি। একেবারেই ভিন্ন জনরার একটা গল্প। মনোযোগ এই গল্পের দিকে ছিল। সেজন্য অন্য কাজে অতোটা ব্যস্ত হতে পারিনি। ছ’মাস পরপর গল্পের ধরন পরিবর্তন হয়। এজন্য বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এখন মোটামুটি ঠিকঠাক করে ফেলেছি। প্রযোজকও রেডি আছে। প্যান্ডামিক আসার কারণে আমার ফিল্মের গল্পটা অনেককিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে। শিল্পী চূড়ান্ত হয়নি। হয়তো শিগগির সবকিছু ঠিক করে শুটিংয়ে নামবো। তবে এতোটুকু নিশ্চিত বলতে পারি, এখন থেকে নিয়মিত নির্মাণে আমাকে পাওয়া যাবে।
পরিচালক হলেন কেন?
আমি আগে মিউজিকে ছিলাম। ড্রামস বানাতাম। আমার মধ্যে একটা ক্রিয়েটিভ ন্যাক রয়েছে। সেই জায়গা থেকে পরিচালনায় এসেছি। আমি বড় হয়েছি একা। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ঢাকায় ছিলাম। তারপর ইন্ডিয়াতে চলে যাই। ইউনিভার্সিটি শেষ করে আবার ঢাকায় ফিরি। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। পরিবারে একটাই ছেলে আমি। একা থাকার কারণে গল্প বলার সঙ্গী খুঁজতাম। আগে এটা গানে ড্রাম বাজিয়ে করতাম। কিন্তু এক সময় মনে হয় এটা অনেক লিমিটেড। এখন পরিচালনায় মাধ্যমে আমি অনেক কিছু অনেক মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছি।