চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এক মাসে লাইসেন্স নিয়েছে মাত্র ১৮৯ জন চাল ব্যবসায়ী

অক্টোবরে ঢাকা সিটিতে মাত্র ১৮৯ জন চাল ব্যবসায়ি ‘ফুড গ্রেইন’ লাইসেন্স নিয়েছে। নতুন লাইসেন্স নেয়ার জন্য আরও প্রায় ৩শ আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলো দেয়া হলে মোট নতুন লাইসেন্সধারী চাল ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫শ। কিন্তু ঢাকা মহানগরে চাল ব্যবসায়ী রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

তবে খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, সরকারের নির্দেশের পর ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স নিতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫/৬ জন ব্যবসায়ী অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেন। তাদের প্রত্যাশা শিগগিরই ব্যবসায়ীরা স্বউদ্যোগে লাইসেন্স নিবে। আর যদি না নেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিমত, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে এই লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও, এটা তেমন কাজে আসবে না। বরং তাদের সমস্যা বাড়বে। তাদের যুক্তি লাইসেন্স নেয়ার পর সরকারকে প্রতি ১৫ দিন পর চাল বিক্রি ও মজুদের পরিমাণ জানাতে হবে। এতে তারা অতিরিক্ত ঝামেলায় পড়বেন। ব্যবসা বন্ধ করে সরকারি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। তবে যারা চাল, ডালসহ মুদি মালামাল বিক্রি করেন তারাই মূলত লাইসেন্স নিতে অনাগ্রহী।

এ বছর বন্যা ও ব্লাস্ট রোগে হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দফায় দফায় বেড়ে যায় চালের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে আনে। বাকিতেও চাল কেনার সুযোগ দেয়। এছাড়া সরকারিভাবে কয়েকটি দেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। তবু দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সরকার বিভিন্ন মিলে অভিযান চালিয়ে চালের মজুদ দেখতে পেয়ে মজুদকারীদের জরিমানা করে। এরপর লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।

গত ২ অক্টোবর খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ৩০ অক্টোবরের মধ্য চাল ও গম ব্যবসায়ী, চালকল মালিক, আড়তদার, মজুতদার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের খাদ্য অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক মেট্রিক টনের অধিক যারা ব্যবসা করে তাদের এ লাইসেন্সের আওতায় আসতে হবে।

মন্ত্রীর এই নির্দেশের পরই অক্টোবর মাসে ঢাকায় মাত্র ১৮৯ জন ব্যবসায়ী লাইসেন্স নিয়েছেন। লাইসেন্স নেয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন আরো প্রায় ৩শ ব্যবসায়ী। অথচ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ৫ লাখ চাল ব্যবসায়ী রয়েছে। আর সারা দেশে চাল ব্যবসায়ীর সংখ্যা হবে ৩০ লাখের বেশি। তবে যারা চালকল মালিক, আড়তদার বা মজুতদার তাদের অনেকেই আগে থেকেই লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে।

চাল আমদানি
চালের দাম কমছে।

জানা গেছে, সারাদেশে বড় মিলমালিক, মজুদদার ও আমদানিকারকদের প্রায় সবারই লাইসেন্স থাকলেও মাঝারি পর্যায়ে ২৫ শতাংশের এ লাইসেন্স নেই। আবার যারা লাইসেন্স করেছেন তাদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নিয়মিত তা নবায়ন করেন না। আর দেড়-দু’টন চাল মজুদকারী ব্যবসায়ীদের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশেরই লাইসেন্স নেই।

খাদ্য অধিদপ্তরের একজন উদ্ধর্তন কর্মকর্তা জানান, দেশে মাত্র ৩৯ হাজার চাল ব্যবসায়ীর লাইসেন্স আছে। প্রায় এক লাখ চাল ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই।

ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে অনাগ্রহ কেন জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের হাজী ইসমাইল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার জসিম উদ্দিন নিজেদের লাইসেন্স অনেক আগেই করেছেন জানিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অনেকে মনে করে লাইসেন্স নিলে অতিরিক্ত ঝামলায় পড়তে হবে। ১৫ দিন পর পর চালের মজুদ সম্পর্কে সরকারকে জানাতে হবে। এতে তাদের সময় নষ্ট ও ব্যয় বাড়বে। তাই লাইসেন্স নিতে ইচ্ছুক নয়। তবে লাইসেন্স নেয়া ভাল বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, লাইসেন্স নিলেই যে, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে চাল আসবে বিষয়টা এমন নয়, কারণ এ বছর চালের দাম কোনো ব্যক্তি বা চক্রের কারণে বাড়েনি। দাম বেড়েছে কর্তৃপক্ষের গড়িমসির কারণে। যখন ফসল নষ্ট হয়েছে তখনই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিলে দাম আজকের পর্যায়ে আসতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চাল
চালের দাম

তবে চালের বর্তমান দাম খুব বেশি নয় মন্তব্য করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে চাল থাকলে খুব বেশি দাম বলে মনে হয় না। কারণ এর নিচে চালের দাম নেমে গেলে কৃষকরা উৎপাদন বিমুখ হবে। এতে চালের সংকট দেখা দিতে পারে।

ব্যবসায়ীরা নিজে থেকেই লাইসেন্স নিচ্ছে বলে জানান খাদ্য অধিদপ্তরের ঢাকা রেশনিংয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক তপন কুমার দাস। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রতিদিনই কমবেশি লাইসেন্সের জন্য আবেদন আসে। তবে কেউ যদি না নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।