স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ‘হেনস্তার শিকার’ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বেহাল দশা দেখে বিস্ময়ের সঙ্গে হতাশ হয়েছি ! প্রায় ৫ ঘণ্টা একটি কক্ষে এই নারী সাংবাদিককে আটকে রাখা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নারী কর্তৃক তাকে শারীরিক লাঞ্ছনার ভিডিও আমাদের স্তম্ভিত ও হতবাক করেছে।
বিবেককে থমকে দেয়া এমন ঘটনা দেখে সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা নিয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির বলা কিছু তাৎপর্যপূর্ণ কথা স্মরণে আসছে। ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘লিগ্যাল এইড ও আইন সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছিলেন, ‘সমাজের অসঙ্গতি দূরীকরণে এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। মানুষের তথ্য জানার অধিকার এবং গণমাধ্যমের তথ্য জানানোর গভীর দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সামাজিক অঙ্গীকার নিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে।’
হ্যাঁ, বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতায় একজন রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকাই পালন করেছেন বলা যায়। কারণ, তার এক একটি রিপোর্ট অসঙ্গতি-অনিয়মের অদৃশ্য দেয়ালকে ভেঙে দিয়েছে। করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রোজিনা ইসলাম সাড়া জাগানো সব রিপোর্ট করেছেন। তার এসব রিপোর্ট সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু গতকাল পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ‘হেনস্তার শিকার’ এই নারী সাংবাদিকের বেহাল দশা আমাদের দেখতে হয়েছে।
প্রথম আলো বলছে, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে বিকেল তিনটার দিকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁকে একটি কক্ষে আটক করেন। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত ৯ টার দিকে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাদী হয়ে করা এই মামলায় রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার রোজিনা ইসলামকে মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। বেলা ১১টার পর তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে রোজিনা ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী বৃহস্পতিবার রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের শুনানি হতে পারে।’
দেশের সংবিধান অনুযায়ী কোন নাগরিকই আইনের উর্ধ্বে নন। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে যথাযথ ভাবে আইনের আওতায় এনে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কাউকে বেআইনি ভাবে আটকে রেখে শারীরিক লাঞ্ছনার অধিকার দেশের প্রচলিত আইন কাউকে দেয়নি। এমনটি হলে তা অবশ্যই ফৌজদারী অপরাধ। সেক্ষেত্রে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। অন্যদিকে, তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় আদালতেই তিনি ন্যায় বিচার পাবেন সে প্রত্যাশা করছি। সেই সাথে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের হাইকোর্টের এই মন্তব্য স্মরণ করছি যে…’সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু মন তথ্য তো খুঁজবেই।’
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)