চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

একের পর এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসির করণীয় কী?

বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই আইনের তোয়াক্কা না করা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা, সনদ বাণিজ্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা সরানোর মতো গুরুতর অভিযোগ থাকলেও একের পর এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৭ তারিখে অনুমোদন পাওয়া নতুন দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় ও আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

কিন্তু দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া না দেওয়ায় তাদের কোনো হাত নেই। তারা শুধু অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের ব্যাপারে নজর রাখে এবং সে অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ পাঠায়। কিন্তু তা বাস্তবায়নের ক্ষমতাও কমিশনের নেই।

সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া দুটিসহ দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৯টি। এছাড়া সরকারি ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভালের দায়িত্বও ইউজিসির হাতেই। কিন্তু যুগোপযোগী আইন, প্রয়োজনীয় লোকবল, পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং স্বায়ত্তশাসন না থাকায় সমস্যায় জরাজীর্ণ খোদ ইউজিসিই।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ১৯৭৩ সালে কমিশন প্র্রতিষ্ঠার সময় বঙ্গবন্ধু যে আইন করে দিয়েছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ৬টি। ছিলো না কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি বেসরকারি প্রায় দেড় শ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও আইনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান

‘‘আইন সংশোধনের জন্য গত নয় বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে তাগাদা দিয়েছেন। কিন্তু অজানা কারণে হচ্ছে হবে করে এতোদিনেও সে আইন হয়নি।’’

তিনি বলেন, কমিশনের আইন অনুযায়ী আমরা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তদারকি করি, নতুন নতুন বিভাগের অনুমোদন দেই। আইনের ব্যত্যয় হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারি। কিন্তু সে সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষমতা কমিশনের নেই। তার এখতিয়ার একমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন না মানার প্রবণতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন: বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই আইন না মানার প্রবণতা রয়েছে। তাদের বারবার বলা হলেও তারা মানে না। অনুমোদন না থাকার পরেও নতুন নতুন বিভাগ খুলছেন, ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুন শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন।

বিষয়গুলো নিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলতে গিয়ে হুমকির শিকার হয়েছেন জানান কমিশনের চেয়ারম্যান।

‘‘একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন রয়েছে ৩০ জন। কিন্তু সেখানে তারা দ্বিগুন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুললে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দিয়েছে। গত দুইদিন আগে আমাদের দুজন কর্মকর্তাকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’

তাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তিনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে অবগত করা ছাড়াও শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীর করেছেন বলে জানান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। সাধারণ ডায়েরী করেছেন সর্বশেষ হুমকি পাওয়া ইউজিসির দুই কর্মকর্তাও।

ইউজিসিকে সমস্যামুক্ত করে সত্যিকার অর্থেই কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে আইনের সংশোধন করে পর্যাপ্ত লোকবল, অবকাঠামো এবং স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।