চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

একুশের গানেই বেঁচে থাকবেন গাফফার চৌধুরী

চির ঘুমে সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। লন্ডন স্থানীয় সময় বুধবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যু শোক ছুঁয়ে যাচ্ছে আপামর বাঙালি জাতিকে। 

সব পরিচয়-সৃষ্টি ছাপিয়ে তার লেখা একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র জন্য বিশেষ ভাবে জাতি তাকে স্মরণ করছে। বিশেষ করে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা মনে করছেন- রক্তে কেনা বাংলা যতোদিন থাকবে, ততোদিন থাকবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি- আর গানটির স্রষ্টা হিসেবে উচ্চারিত হবে গাফফার চৌধুরীর নাম!

গাফফার চৌধুরীকে বিদায় জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, “উনাকে (গাফফার চৌধুরী) আমি অনেকবার একটা কথা বলেছি, “গাফফার ভাই, আপনি যদি আর কিছু নাও লিখতেন, কেবল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’র জন্যই আপনার স্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে পাকা থাকতো। আপনাকে ভালোবাসুক মন্দবাসুক, প্রতি বছর একবার করে বাংলাভাষী মানুষেরা প্রাণ খুলে গাইবে আপনার লেখা গান। কোনো এক একলা ছাদের নীচে বসে লিখা আপনার শব্দগুলা ডানা মেলবে ওদের কণ্ঠের আবেগে। ভাবা যায় কি এক বিস্ময়কর ঘটনা এই গান?”

গাফফার চৌধুরীর সাথে ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা উল্লেখ করে ‘টেলিভিশন’ এর এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘গাফফার ভাইয়ের অনেক মত বা কথার সাথে আমার দ্বিমত ছিলো, অনেক কথার সাথে একমত ছিলো। আমার কাজ খুঁজে বের করে দেখে আমাকে ফোন দিয়ে উনি উৎসাহ দিতেন। আমার কাজ সরকারি সেন্সর কলে আটকা পড়লে তিনি এর প্রতিবাদ করতেন। তিশার অভিনয়ের দারুন ভক্ত ছিলেন উনি।’

গাফফার চৌধুরীর সিনেমা রুচি নিয়ে ফারুকী লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যতটুকু বুঝেছি সিনেমার ব্যাপারে উনার আগ্রহ ছিলো প্রবল। এবং উনার সিনেমারুচি উনার সময়ের তুলনায় অগ্রসর।’

ফারুকীর কথার সূত্র ধরেই যেন গুণী অভিনেত্রী জয়া আহসানও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি নিয়ে লিখেছেন, “ফেব্রুয়ারি মাসটি এলেই আমাদের কার না মনে বাজতে থাকে সেই গানটি! আর একুশের ভোর থেকে সে গান ছাপিয়ে সারা বাংলাদেশের আকাশে–বাতাসে: ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। জাতির মর্মমূলে গেঁথে যাওয়া এই গান টিকে থাকবে বাঙালি যত দিন পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকবে তত দিন। এই গানটি যদি বেঁচে থাকে, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুও কি তাহলে সম্ভব।”

ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে রচিত গানগুলোর মধ্যে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির জনপ্রিয়তা সর্বাধিক এবং এটিই একুশের মূল গান হিসেবে স্বীকৃত। যা এখন একুশের প্রভাতফেরীর গান। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গানটি রচনা করেন গাফফার চৌধুরী। প্রথমে আবদুল লতিফ গানটি সুরারোপ করেন। তবে পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৪ সালের প্রভাত ফেরীতে প্রথম গাওয়া হয় আলতাফ মাহমুদের সুরে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর।

১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তাঁর ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করেন। বর্তমানে এই গানটি হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশ, জাপানিসহ ১২টি ভাষায় গাওয়া হয়।